করোনার সংক্রমণ বাড়লে আবারও টিকা কর্মসূচির পরিকল্পনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
প্রতিবেশী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯-এর সাব-ভ্যারিয়েন্ট জেএন১-এর সংক্রমণ বাড়তে শুরু করায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনাভাইরাসের টিকা কর্মসূচি পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা করছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)-এর পরিচালক ডা. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, দেশে সংক্রমণ বাড়লে সরকার পুনরায় টিকা কার্যক্রম চালু করতে প্রস্তুত।
'আমাদের কাছে এখনও কোভিড ভ্যাকসিনের প্রায় সাত লাখ ডোজ রয়েছে, যেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়নি। এছাড়া দেশে আরও ভ্যাকসিন আসবে।
'শীঘ্রই টিকা কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার বিষয়ে জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির একটি সভা হবে। কমিটি পরামর্শ দিলে আমরা আবার টিকাদান শুরু করব,' বলেন তিনি।
বাংলাদেশে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণের হার অনেকদিন ধরে ১ শতাংশের নিচে ছিল। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে সংক্রমণের হার বাড়ছে। মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সংক্রমণ ৩.৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ দিন ৮৮৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৮ জনের শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হয়।
নতুন কোভিড সাব-ভ্যারিয়েন্টের পর বিভিন্ন দেশে সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়ছে। বাংলাদেশেও সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া যায়নি।
ভারতে করোনাভাইরাসে নতুন করে ৫৭৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন দুইজন। ২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৫৬৫ জনে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এম মুশতাক হোসেন বলেন, 'যারা এখনও ভ্যাকসিন পাননি তাদের টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা উচিত। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, এ নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়াতে অনেক বেশি কার্যকর। তাই এটির সংক্রমণের হার বেশি।'
'তারপরও আবার ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচি গ্রহণ করা ভালো হবে,' বলেন তিনি।
বাংলাদেশ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভ্যাকসিনের তৃতীয় এবং চতুর্থ ডোজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
পরবর্তীসময়ে টিকার স্বল্পতা এবং মানুষের আগ্রহের অভাবের কারণে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়াও ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সারাদেশে ১৫ কোটি ৯২ লাখ ৯৫ হাজার মানুষ কোভিড টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। আর দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ১৪ কোটি ২১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৪২ জন।
এই হিসেবে এক কোটিরও বেশি মানুষ টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাননি।
তৃতীয় ডোজ নিয়েছেন ছয় কোটি ৮৫ লাখ ৫৮ হাজার এবং চতুর্থ ডোজ নিয়েছেন সাড়ে ৫০ লাখ মানুষ।
এদিকে এক ডোজ টিকাও না পাওয়া মানুষের সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয় লাখ।
করোনাভাইরাসের বিস্তার এড়াতে এবং দেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বন্দরগুলোতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে জরুরিভিত্তিতে করোনার বুস্টার ডোজ দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।