অবশেষে খুলছে মিরপুর স্টেডিয়ামের বন্ধ দুয়ার
ক্রিকেটারদের পদচারনায় যে স্টেডিয়াম সব সময় মুখরিত থাকতো, সেই স্টেডিয়ামই পড়ে ছিল বিরাণ বাড়ি হয়ে। দীর্ঘ চার মাস ধরে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মূল গেটে ঝুলেছে তালা। করোনাভাইরাসের কারণে এর বাইরে উপায়ও ছিল না। অবশেষে দিশা মিলেছে। খুলতে যাচ্ছে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়াম।
আগামী সপ্তাহ থেকেই খুলে দেওয়া হবে মিরপুর স্টেডিয়ামের মূল মাঠ ও একাডেমি মাঠ। না, দলগত অনুশীলন শুরুর সিদ্ধান্ত এখনও নিতে পারেনি বিসিবি। ব্যক্তিগত অনুশীলনের জন্য মাঠ খুলে দিচ্ছে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। গত শনিবারের মিটিংয়ে এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অনেক ক্রিকেটারের জন্যই এটা স্বস্তির খবর। আর মুশফিকুর রহিমের জন্য তো রীতিমতো খুশির সংবাদ। মাঠে ফিরতে তর সইছে তার। মিরপুর স্টেডিয়ামে সুযোগ নেই বলে বাড্ডার বেরাইদে ফর্টিস গ্রুপের মাঠে অনুশীলন শুরু করেছেন জাতীয় দলের অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। গত কয়েকদিন নিয়মিত অনুশীলন করে আসছেন তিনি।
মুশফিকের মতো আরও অনেক ক্রিকেটারই আছেন, যারা মাঠে গিয়ে ফিটনেসসহ অন্যান্য অনুশীলন সারতে চায়। বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার দ্বিতীয় দফায় আবেদনও করেছেন ব্যক্তিগত অনুশীলনের অনুমতি চেয়ে। সেটার প্রেক্ষিতেই খুলে দেওয়া হচ্ছে মিরপুর স্টেডিয়ামের বন্ধ দুয়ার।
জাতীয় ক্রিকেটারদের কন্ডিশনিং ক্যাম্পের জন্য ৩৮ জনের দল প্রস্তুত করা হয়েছে গত মাসে। কয়েকদিন আগে হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের (এইচপি) ২৬ জনের দলও গঠন করা হয়েছে। নির্বাচকদের বিবেচনায় থাকা এসব ক্রিকেটারদের সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ করেছে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগ।
অনুশীলনে আগ্রহী ক্রিকেটারদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ফিটনেস অনুশীলনের জন্য জিমনেশিয়াম ছাড়াও অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হবে ক্রিকেটারদের। মিরপুর স্টেডিয়ামের মূল মাঠ ও একাডেমি মাঠে রানিং করতে পারবেন বর্তমানে বাসাতেই ফিটনেসের কাজ চালিয়ে যাওয়া ক্রিকেটাররা। আগামী শনিবার থেকে শুরু হতে পারে ব্যক্তিগত অনুশীলন। তবে স্কিল ট্রেনিং এখনই শুরু হচ্ছে না।
কঠিন সময়ে অনুশীলন শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিসিবির মেডিকেল টিমের ওপর থাকছে বিশেষ দায়িত্ব। এই অবস্থায় মিরপুর স্টেডিয়ামে ব্যক্তিগত অনুশীলনের ব্যাপারটি কতটা নিরাপদ, স্বাস্থ্য ঝুঁকি, নিরাপদ দূরত্ব; এসব বিষয় তদারকি করবে মেডিকেল টিম।
বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা শনিবার থেকে অনুশীলন শুরু করতে যাচ্ছি। খেলোয়াড়দের জানানো হয়েছে। শুক্রবারের মধ্যে খেলোয়াড়রা জানাবে কারা কারা অনুশীলন করতে রাজি আছে। যদি তালিকাটা শুক্রবারের মধ্যে পেয়ে যাই, আমরা একটা রোস্টার করে নিবো।'
আপাতত ফিটনেস ও জিম করার সুযোগ দেওয়া হবে ক্রিকেটারদের। এখনও স্কিল ট্রেনিং শুরুর করার সিদ্ধান্ত নেয়নি বিসিবি। দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, 'মূলত ফিটনেস এবং জিম; এই দুটো কার্যক্রম চলবে। এখন স্কিল ট্রেনিং হবে না। এখন শুধু ব্যক্তিগত ফিটনেস ট্রেনিং হবে। ঈদের আগ পর্যন্ত এটা চলবে। এমনিতে সবকিছু প্রস্তুত আছে।'
কতজন ক্রিকেটার মিরপুরে এসে অনুশীলন করতে চান, সেই তালিকার জন্য অপেক্ষা করছে বিসিবির মেডিকেল বিভাগ। তালিকা পাওয়ার পর রোস্টার বানিয়ে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিসিবির এই চিকিৎসক বলেন, 'ক্রিকেটারের সংখ্যা দরকার আমাদের। সংখ্যা পেলে আমরা রোস্টার করতে পারব যে কয়জন, কখন অনুশীলন করতে পারবে। চূড়ান্ত তালিকা না পেলে আমরা এটা করতে পারছি না। এমনিতে সব কিছু প্রস্তুত আছে।'
ব্যক্তিগত অনুশীলনের অনুমতি দিলেও বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলছেন অন্য কথা। কঠিন এই সময়ে মাঠে অনুশীলন করার ব্যাপারে ক্রিকেটারদের নিরুৎসাহিত করছে বিসিবি।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'আমরা চাই ক্রিকেটাররা বাসাতেই ফিটনেসের কাজ করুক। এ সময়ে মাঠে এসে অনুশীলন করার ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকেই। এ কারণে মাঠে আসতে ক্রিকেটারদের নিরুৎসাহিত করছি আমরা। স্বাভাবিক অবস্থা না ফিরলে এই কার্যক্রমে ঝুঁকি থেকে যায়।'
বিসিবি নিরুৎসাহিত করলেও ব্যক্তিগত অনুশীলন শুরু হচ্ছে, চলবে ঈদ পর্যন্ত। দলীয় অনুশীলনের জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। কারণ সরকারের অনুমতি ছাড়া দলগত অনুশীলন শুরুর সুযোগ নেই। এই অনুমতি আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগ পর্যন্ত ব্যক্তিগত অনুশীলনেই সীমাবদ্ধ থাকছে বাংলাদেশের ক্রিকেট।