প্রথমবারের মতো আদালতে মুখোমুখি ট্রাম্প ও স্টর্মি ড্যানিয়েলস
যৌন সম্পর্ক ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো আদালতে মুখোমুখি হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সাবেক পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস। আদালতে স্টর্মি তার ও ট্রাম্পের মধ্যকার ২০০৬ সালের সম্পর্কের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
স্টর্মি নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের আদালতের কাছে কয়েক ঘণ্টা ধরে ট্রাম্পের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক ও ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে আগে ট্রাম্পের সঙ্গে হওয়া অর্থ লেনদেনের ঘটনা নিয়ে কথা বলেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, ২০০৬ সালে স্টর্মির সঙ্গে ট্রাম্পের যৌন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন ট্রাম্প। নির্বাচনের আগে যৌন সম্পর্কের বিষয়ে মুখ না খুলতে স্টর্মিকে (৪৫) এক লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন তিনি। আর এ তথ্য তিনি তার ব্যবসায়িক রেকর্ডে গোপন করেন।
স্টর্মি এর আগেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের বিষয়টি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে, সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেছিলেন। তবে এবারই প্রথম অভিযুক্ত ট্রাম্পের উপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিলেন তিনি।
স্টর্মি বিচারকদের সামনে বলেন, ২০১৮ সালে বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে তার জীবনে 'অশান্তি' শুরু হয়। তাকে একঘরে করে দেওয়া হয়। এমনকি তিনি হয়রানির শিকারও হন।
স্টর্মি যখন আদালতে সাক্ষী দিচ্ছিলেন, তখন তার কাছ থেকে কয়েক ফুট দূরে ডিফেন্স টেবিলে বসেছিলেন ট্রাম্প। স্টর্মির কথা বলার পুরো সময়টি তিনি চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি- স্টর্মিকে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি ঢাকার জন্য ব্যবসায়িক রেকর্ডে তথ্য গোপনের অভিযোগে তিনি দোষী নন। তিনি স্টর্মির সঙ্গে কোনো যৌন সম্পর্ক হওয়ার কথাও অস্বীকার করেন।
আদালতে ট্রাম্পের আইনজীবীরা জানান, ট্রাম্প 'দ্য অ্যাপ্রেন্টিস' নামে একটি টিভি রিয়েলিটি শো হোস্ট করতেন। স্টর্মি সেই শো-তে অংশগ্রহণের সুযোগ চেয়েছিলেন।
বিষয়টি স্বীকার করে স্টর্মি জানান, ট্রাম্পের সাথে সরাসরি দেখা হলে তিনি সেই শো-তে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন বলে আশা করেছিলেন।
আদালতের কাছে স্টর্মি ঘটনা শুরুর কথা তুলে ধরে বলেন, একটি তারকা গলফ টুর্নামেন্টে ট্রাম্পের সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়। ট্রাম্প তখন স্টর্মিকে তার হোটেল স্যুটে আমন্ত্রণ জানান। সেখানে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক হয়।
স্টর্মি জানান, হোটেল স্যুট থেকে বের হওয়ার সময় ট্রাম্প কক্ষের দরজা আটকে তাকে বাধা দেন। ওই সময়ে কোনো মাদক বা অ্যালকোহল গ্রহণ না করা সত্ত্বেও কিছু সময়ের জন্য স্টর্মি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। জ্ঞান ফেরার পর দেখেন তিনি বিছানায় শুয়ে আছেন। পরনে পোশাকও নেই। এ নিয়ে ট্রাম্পকে কোনো কিছু না বলে সেখান থেকে বেরিয়ে যান স্টর্মি।
স্টর্মি বলেন, ট্রাম্প তাকে ঘন ঘন বিরক্ত করছিলেন। এ কথা তিনি ট্রাম্পকেও জানিয়েছিলেন। পরে ট্রাম্প স্টর্মিকে একটি ম্যাগাজিন বই দিয়ে তাকে মারতে বলেছিলেন।
আদালতে এ কথার প্রতিবাদ করে ট্রাম্প বলেন, 'এটি বাজে কথা।'
মঙ্গলবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের আদালতে উপস্থিত স্টর্মির পরনে ছিল কালো রঙের পোশাক। চোখে ছিল কালো চশমা।
তিনি বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের বিষয়টি তিনি মাত্র কয়েকজনের কাছে প্রকাশ করেছিলেন। এর পর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি ট্রাম্পকে দেখেছেন। কিন্তু তাকে 'দ্য অ্যাপ্রেন্টিস' শো-তে না রাখায় তারপর থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে তার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
স্টর্মি আরও জানান, ২০১১ সালে একটি পার্কিং লটে তিনি হুমকির শিকার হন। এ ঘটনার পর যৌন সম্পর্কের বিষয়টি গোপন রাখবেন বলে ঠিক করেন। কিন্তু ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যখন একাধিক যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে, তখন তিনি মুখ খোলার সিদ্ধান্ত নেন।
স্টর্মির মুখ বন্ধ রাখার জন্য ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন তাকে অর্থ দেন। প্রসিকিউটরদের ভাষ্য- স্টর্মিকে দেওয়া অর্থ গোপন করতেই ট্রাম্প ব্যবসায়িক নথিতে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেন।
স্টর্মি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগেই এ অর্থ সংগ্রহের আগ্রহী ছিলেন। কারণ তার আশঙ্কা ছিল যে যদি ট্রাম্প নির্বাচনে জিতে যান, তাহলে হয়ত তিনি এ অর্থ আর পাবেন না।
এদিকে আদালতে ট্রাম্পের আইনজীবীরা স্টর্মির বক্তব্যের সামঞ্জস্য ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ সময় অবশ্য স্টর্মি স্বীকার করেন যে তিনি ট্রাম্পকে 'ঘৃণা' করেন এবং সত্য তুলে ধরার মাধ্যমে ন্যায়বিচার পেতে চান। তবে দীর্ঘ সাত বছর তিনি কেন চুপ ছিলেন, সেটি তার বক্তব্যে স্পষ্ট নয়।
এ বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হয়েছেন ৭৭ বছর বয়সী ট্রাম্প। তিনি এ বিচার কার্যক্রমকে নির্বাচনে তার বিজয় ঠেকানোর একটি প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
স্থানীয় সময় আগামী বৃহস্পতিবার আবারও মামলার শুনানি শুরু হবে। সেখানে স্টর্মি উপস্থিত থাকবেন।