রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে বিশ্বস্ত সের্গেই শোইগুকে কেন সরিয়ে দিলেন পুতিন?
রাশিয়ায় মন্ত্রিপরিষদে যেই থাকুক না কেন দেশকে নিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত শুধু একজনই নিচ্ছেন, তিনি হলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
আধুনিক রাশিয়ার সমস্ত রাজনৈতিক ব্যবস্থা তাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। কে সরকারে আছেন অথবা কারা সরকারের বাইরে থাকবেন তা আলোচনা করার সময় এটি মাথায় রাখা উচিত।
যদিও মনে হচ্ছে রুশ সরকারি কর্মকর্তাদের পরিবর্তন খুব আকর্ষণীয় কিছু নয় তবুও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সের্গেই শোইগুকে সড়িয়ে দেয়ার ঘটনা বেশ কিছু জায়গা থেকে তাৎপর্যপূর্ণ।
এবং আরেকটি ভাবনা যেটি আমাদের মাথায় আসে তা হলো, রাশিয়ায় রদবদল একটি বিরল জিনিস। বিশেষ করে বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জন্য এটি একটি বিরল ঘটনা।
রাশিয়ার দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের কথাই ধরুন। তিনি ২০ বছর ধরে সরকারি চাকরি করেছেন। ১২ বছর ধরে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন (এ সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্য ছয়জন প্রতিরক্ষাসচিব পেয়েছে)।
তাকে পুতিনের খুব কাছের লোক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু পুতিনের সাথে ঘনিষ্ঠতা থাকার মানে এই নয় যে আপনি নিশ্চিতভাবে আপনার চাকরি টিকিয়ে রাখতে পারবেন।
পুতিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সের্গেই শোইগুকে সরিয়ে দিয়ে নিকোলাই পাত্রুশেভের জায়গায় নিরাপত্তা পরিষদের সচিবের দায়িত্ব দিয়েছেন। শোইগুর পরিবর্তে রুশ অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ ও সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেই বেলুসভ নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।
কিন্তু কোনোভাবেই এটিকে শোইগুর জন্য পদোন্নতি হিসেবে ধরে নেওয়া যাবে না।
তাহলে কেন পুতিনের একজন অনুগতকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে? কেন একজন অর্থনীতিবিদকে নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী করা হলো? এবং এ সিদ্ধান্ত ভ্লাদিমির পুতিন সম্পর্কে আমাদের কী বলে?
পুরো ঘটনা আসলে বিস্ময়ের জন্ম দিচ্ছে না। সের্গেই শোইগুকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে তা নিয়ে আগেই কানাঘুষো চলছিল। তার একজন সহকারী তৈমুর ইভানভকে সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
পাশাপাশি একজন অর্থনীতিবিদকে শোইগুর স্থানে বসানোর পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে। চলমান রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া যে পরিমাণ অর্থ ঢালছে তার জন্য একজন অর্থনীতিবিদকে এ দায়িত্বে নিয়ে আসা বিশেষ অর্থ বহন করে।
রাশিয়ায় প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির আনুমানিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। রুশ অর্থনীতি যুদ্ধের কারণে অনেক প্রভাবিত হয়েছে।
অর্থ, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা বোঝেন এমন একজনকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী করার যুক্তি হলো— রদবদল করে এমন একজনে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যার বিরুদ্ধে কোন দুর্নীতির অভিযোগ নেই।
মজার বিষয় হলো, পুতিন এই মুহূর্তটিকেই রদবদলের জন্য বেছে নিয়েছেন। ২০২২ সালে যখন রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক বিপর্যয়ে পড়েছিল তখন তিনি শোইগুর ওপরেই আস্থা রেখেছিলেন।
২০২৩ সালে ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের (প্রয়াত) সাথে মন্ত্রীর খুব প্রকাশ্য বিবাদের সময়ও পুতিন শোইগুর ওপরেই আস্থা রেখেছিলেন। প্রিগোজিন শোইগুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিলেন এবং তাকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছিলেন।
এখন রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে থাকার সময়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে তাকে সড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এটি থেকে আবারো প্রমাণিত হয়, পুতিন চাপের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পছন্দ করেন না। তিনি তার পছন্দের সময়েই সিদ্ধান্ত নেন।
তবে রুশ সরকারের রদবদলের আরো একটি বৈশিষ্ট্য আছে। এটা সবসময় আপনার মনে অনেক প্রশ্ন নিয়ে আসবে।
সের্গেই শোইগুর ভবিষ্যৎ কি? তিনি কি নিরাপত্তা পরিষদে একটি নতুন ক্ষমতার ভিত্তি তৈরি করবেন? নাকি এটি অনিবার্য যে নতুন পদে তার ক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে?
নিরাপত্তা পরিষদে নিকোলাই পাত্রুশেভের স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তিটির জন্য পরবর্তীতে কী অপেক্ষা করছে? দীর্ঘদিন থেকে রাশিয়ার অন্যতম ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত পাত্রুশেভ কি তার প্রভাব বজায় রাখবেন? বজায় রাখলেও কীভাবে?
নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিয়োগের মানে কি এই যে ভ্যালেরি গেরাসিমভের জায়গায় একজন নতুন চিফ অফ দ্য জেনারেল স্টাফ আসবেন?
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়