শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করলো বাকৃবির গবেষক দল
দেশীয় শিং মাছের প্রথম জিনোম সিকোয়েন্স সম্পন্ন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসলিমা খানমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ, জাপান ও সুইডেনের একদল গবেষক।
এ উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে এখন শিং মাছের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
বুধবার (১৫ মে) বাকৃবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসলিমা খানম এসব তথ্য তুলে ধরেন।
অধ্যাপক ড. তাসলিমা খানম বলেন, "বিশ্বে মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয় শীর্ষ প্রজাতি হল তিলাপিয়া, যার সিংহভাগ আসে মনোসেক্স তিলাপিয়া থেকে। তেমনিভাবে গবেষণালব্ধ ফলাফল ব্যবহার করে মনোসেক্স শিং মাছ উৎপাদন করা সম্ভব– যা শিং মাছের বাণিজ্যিক চাষে বিপ্লব ঘটাবে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা ও খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষায় মৎস্য উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই।"
তিনি বলেন, শিং মাছের জিনোম শুধুমাত্র পুরুষ-স্ত্রী মাছ নির্ধারণকারী জিনই নয়, অন্যান্য বৈশিষ্ট্য যেমন— বৃদ্ধি, রোগপ্রতিরোধ ও প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য দায়ী জিন শনাক্তকরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
"পুরুষ-স্ত্রী মাছ নির্ধারণকারী জিন শনাক্তের ফলে প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে মার্কার আসিসটেড সিলেকশনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে মনোসেক্স শিং মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি শিং মাছ প্রজননক্ষম হওয়ার অনেক আগেই স্ত্রী ও পুরুষ মাছ শনাক্তকরণ সম্ভব হবে, যা প্রচলিত সিলেকটিভ ব্রিডিং প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করবে," বলেন তিনি।
গবেষকরা বলছেন, স্ত্রী শিং মাছের বৃদ্ধি পুরুষ মাছ অপেক্ষা ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হয়ে থাকে। এই মাছের বাণিজ্যিক উৎপাদন বাড়ানোর জন্য তিলাপিয়ার মতো মনোসেক্স শিং মাছ উৎপাদনকে অন্যতম উপায় হিসেবে মনে করা হয়। সফলভাবে মনোসেক্স শিং মাছ উৎপাদনের জন্য পুরুষ-স্ত্রী মাছ নির্ধারণকারী জিন শনাক্তকরণ অত্যন্ত জরুরি। সর্বাধুনিক নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করার মাধ্যমে দ্রুত পুরুষ-স্ত্রী মাছ নির্ধারণকারী জিন শনাক্তকরণ সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২০-২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী স্বাদুপানির মোট উৎপাদিত মাছের ২.৫২ শতাংশ আসে শিং ও মাগুর মাছ থেকে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, বন্যা, অতিরিক্ত আহরণ ও প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে দেশীয় এ মাছটি বর্তমানে হুমকির সম্মুখীন।
বাকৃবির নিজস্ব অর্থায়নে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদে ২০২০ সালের করোনাকালীন সময়ে শুরু হওয়া শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রকল্পটি পরবর্তীতে ২০২২-২৪ সাল পর্যন্ত জাপান সোসাইটি ফর দি প্রমোশন অফ সায়েন্স (জেএসপিএস) এর অর্থায়নে সম্পন্ন হয়।
ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে সংগৃহীত দেশীয় শিং মাছের নমুনা ব্যবহার করে জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে সিকোয়েন্সিংয়ের কাজটি করা সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে বায়োইনফরমেটিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেশীয় শিং মাছের প্রথম ড্রাফট জিনোম তৈরি করা হয়।