ইউক্রেন: জেলেনস্কির প্রেসিডেন্ট থাকার মেয়াদ শেষ, কোন নির্বাচন হচ্ছে না, তাহলে এখন কী?
২০ মে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু তিনি এখনো পদে বহাল আছেন কারণ ইউক্রেনে সামরিক আইন চলমান থাকায় নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না।
রুশ-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মতামত জানতে চাইলে গত সপ্তাহে তিনি বলেছিলেন, বৈধ নেতাদের সাথেই শান্তি চুক্তি করা সম্ভব। ইউক্রেনের আইন প্রণেতাদের প্রতি এ ব্যাপারে যথার্থ পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
বর্তমানে ইউক্রেনে নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব না বলেই সেটিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পিছিয়ে দেয়াই জেলেনস্কির এখন একমাত্র বিকল্প। যদি যুদ্ধ থেমেও যায়, নির্বাচন আয়োজন করতে ইউক্রেনের অবকাঠামো পুনরায় নির্মাণ করতেও অনেক সময়ের প্রয়োজন হবে। পাশাপাশি দেশটিতে রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতেও সময়ের প্রয়োজন।
কিন্তু তারপরেও জেলেনস্কির নির্বাচনে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে হচ্ছে। গণতন্ত্র দিয়ে রাষ্ট্র হিসেবে ইউক্রেন কতখানি টিকে থাকবে সেটাই এখন প্রশ্ন। এমনকি অতিদ্রুত ন্যাটোতেও যোগ দেয়ার কোন সম্ভাবনা নেই ইউক্রেনের।
ধারণা করা যায়, জেলেনস্কির সমর্থকরা তার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। এখন এমন একজন রাজনীতিবিদকে তাদের দরকার যিনি লম্বা সময় ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন। এ কারণেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
জুনের মাঝামাঝি সুইজারল্যান্ডের বার্গেনস্টকে ইউক্রেনের জন্য একটি বড় 'শান্তি' সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। যদি সম্মেলনটি হয়েও থাকে, এটি প্রত্যাশার কতখানি পূরণ করতে পারবে সেটিও একটি বড় প্রশ্ন। সম্মেলনে গ্লোবাল সাউথের অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা কম। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনেরও সম্মেলনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।
কিন্তু প্রভাবশালী দেশগুলোকে পক্ষে টানার জন্য জেলেনস্কির কাছে সম্মেলনটি একটি বড় সুযোগ। এদিকে রুশ সমর্থন নিয়ে চীন নিজস্ব শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর অন্যদিকে পশ্চিমারাও দেখিয়ে যাচ্ছে, তারা আলোচনার জন্য বসে আছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সাম্প্রতিক ইউরোপ সফরের সময় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পর্যাপ্ত অস্ত্র সরবরাহ এবং সেটি চলমান রাখার স্পষ্ট আশ্বাস ছাড়া লড়াই চালিয়ে যাওয়া জেলেনস্কির পক্ষে কঠিন। পর্যাপ্ত সৈন্য ও অস্ত্রের অভাব, রাশিয়ার অগ্রগতি এবং পশ্চিমা সমর্থন নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায়, সুইজারল্যান্ড সম্মেলন ব্যর্থ হলে সেটি জেলেনস্কির জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে।
জেলেনস্কির জন্য সমঝোতায় আসাটাও এখন আরো ক্ষতিকর হতে পারে। পশ্চিমকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি— এসব দাবি করা বাদ দিয়ে আর পশ্চিমাদের কাছ থেকে বারবার সামরিক সহায়তা চাওয়া বাদ দিয়ে নিজের রাজনৈতিক দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সময় এসেছে তার।
এটা পরিষ্কার যে মস্কোর কাছেও চলমান পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য খুব বেশি উপায় নেই। তাই চলমান পরিস্থিতির সমাধান অত্যন্ত জটিল বলেই মনে হচ্ছে। রুশ-ইউক্রেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা কম হলেও, কিছু সম্ভাবনা এখনো টিকে আছে।
দিমিত্রি দ্রাইজ কমার্স্যান্ট এফএম-এর একজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়