আইসিজের রায়ের পর ইসরায়েলে সামরিক সহায়তা না পাঠাতে বাইডেনের প্রতি আহ্বান অধিকার গোষ্ঠীগুলোর
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) থেকে অবিলম্বে ইসরায়েলি সরকারকে গাজার দক্ষিণের শহর রাফাহতে স্থল অভিযান বন্ধ করার এবং এ অঞ্চলে সাহায্যের অনুমতি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে দক্ষিণ আফ্রিকার অনুরোধে সাড়া দিয়ে শুক্রবার (২৪ মে) এ রায় দিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত। রায়ে বলা হয়েছে, ইসরায়েলকে অবিলম্বে রাফায় সামরিক অভিযান সহ অন্য সব ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এ রায়ের পর বিভিন্ন অধিকার গোষ্ঠী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এর প্রতি ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছে।
গাজায় চলমান ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং গাজার বেসামরিক স্থাপনা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। গাজাতে তীব্র মানবিক সংকটের মধ্যেই শুরু হয়েছে দুর্ভিক্ষ। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েলি বাধার মুখে গাজায় ঠিকমতো ত্রাণ সহায়তা দিতে পারছে না।
দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মহল থেকে ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করা হচ্ছে। অনেকেই মার্কিন প্রশাসনকে বিভিন্নভাবে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা প্রদান করা থেকে সরে আসার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাফাহর বেসামরিক জনগণের ওপর হামলা না চালানোর জন্য সরাসরি ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। মার্কিন প্রশাসন থেকে ইসরায়েলে একটি অস্ত্রের চালানও স্থগিত করা হয়েছে।
বাইডেন মে মাসের প্রথমদিকে ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছিলেন, রাফাহতে বড় কোনো সামরিক অভিযান চালানো হলে তিনি ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করা বন্ধ রাখবেন। কিন্তু ইসরায়েলি নেতারা মার্কিন সতর্কতাকে উপেক্ষা করেই রাফাহতে অভিযান চালিয়ে গেলেও মার্কিন প্রশাসনকে তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
চলতি মাসে ইসরায়েল গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় হামলা শুরু করলে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি শহরটি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের শেষ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছিল রাফাহ।
গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে একটি মামলা করে। সারা বিশ্বের ১৫ জন বিচারকের প্যানেল ১৩-২ ভোটের ভিত্তিতে ইসরায়েলকে সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেয়।
তবে ইসরায়েল গণহত্যার মামলার অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। আদালতে ইসরায়েল যুক্তি দিয়েছিল, আত্মরক্ষার জন্য তারা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলাকারী হামাস জঙ্গিদের লক্ষ্য করে গাজায় অভিযান চালাচ্ছে।
হামাস আইসিজে'র সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও এ রায় যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে হামাস জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে আইসিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে।
শুক্রবারের আদেশে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো রায় দেওয়া হয়নি। কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বাল্কিস জাররাহের মতে, আদালতের এ রায় রাফাহর জনগণকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, বিভিন্ন দেশের সরকারকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা সহ নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার মাধ্যমে ইসরায়েলকে আইসিজের সিদ্ধান্তগুলো মেনে চলার জন্য চাপ দিতে হবে। বিভিন্ন অধিকার গোষ্ঠী মনে করছে, রায়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে।
ডএডাব্লিউএন (ডন) এর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ক গবেষক মাইকেল শেফার ওমর-ম্যান বলেছেন, আইসিজের এমন সিদ্ধান্ত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আদালতের আদেশ কার্যকর করার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপকে সমর্থন করতে বাধ্য করবে অথবা ঝুঁকি নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়ে যাবে।
কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস এর জাতীয় নির্বাহী পরিচালক নিহাদ আওয়াদ ইসরায়েলকে অবিলম্বে সামরিক সহায়তা পাঠানো বন্ধ করে আইসিজের রায় এর প্রতি সম্মান দেখাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ইসরায়েল গাজাকে বসবাসের অযোগ্য করার চেষ্টা করছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন সহ মার্কিন প্রশাসনের অনেক শীর্ষ কর্মকর্তা এবং রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট সহ উভয় পক্ষের অনেক আইন প্রণেতা এখনো দৃঢ়ভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করছে। তবুও ওয়াশিংটনের বড় সংখ্যক আইনপ্রণেতারা গাজায় অভিযান চালাতে ইসরায়েল বেআইনিভাবে মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করছে কিনা সে বিষয়ে একটি পরিষ্কার তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়