সাবমার্সিবল শিল্পকে নিরাপদ প্রমাণে ফের ডুবোযান নিয়ে টাইটানিক দেখতে যেতে চান এ বিলিয়নিয়ার
'ওশানগেট' ট্র্যাভেলসের ডুবোযান 'টাইটান'-র কথা হয়ত মনে আছে অনেকেরই। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে ২০২৩ সালের ১৮ জুন গভীর আটলান্টিক মহাসাগরে নিখোঁজ হয় ডুবোযানটি। এর ১০ দিন পর সমুদ্রের তলদেশ থেকে টাইটানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়। নিহত হন সকল আরোহী।
এই দুর্ঘটনার পরও ঠিক একইভাবে সাবমেরিনে করে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার পরিকল্পনা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর ধনকুবের ল্যারি কনর এবং ট্রাইটন সাবমেরিনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্যাট্রিক লাহে। খবর বিবিসি'র।
তারা জানান, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে প্রায় ৩,৮০০ মিটার (১২,৪৬৭ ফুট) গভীরতায় তাদের সাবমেরিন নিয়ে যেতে চান।
মঙ্গলবার কনরের কোম্পানির এক মুখপাত্র জানান, ডুবোযানটি একটি সামুদ্রিক সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পরই তার যাত্রা শুরু করবে। তবে এই অভিযানের জন্য এখনও কোনো নির্ধারিত সময়সীমা ঠিক করা হয়নি। তারা ট্রাইটন ৪০০০/২ অ্যাবিসাল এক্সপ্লোরার নামে একটি সাবমার্সিবল ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন, যা নিরাপদে ৪,০০০ মিটার গভীরতায় ডুব দিতে পারে।
ওশানগেট দ্বারা নির্মিত টাইটান সাবমেরিনটি কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল এবং মাত্র ১,৩০০ মিটার গভীরে যেতে পারত।
সমুদ্রে ডুব দেওয়ার এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পরেই মূল জাহাজের সঙ্গে টাইটান-এর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটি পরিচালনা করছিলেন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওশানগেটের প্রধান নির্বাহী স্টকটন রাশ। তিনি ছাড়াও ২২ ফুট লম্বা টাইটান-এর যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন ৫৮ বছর বয়সী ব্রিটিশ বিলিয়নিয়ার হ্যামিশ হার্ডিং, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ (৪৮) এবং তার ১৯ বছর বয়সী ছেলে সুলেমান, ফরাসি ওশেনোগ্রাফার ও টাইটানিক বিশেষজ্ঞ পল-অঁরি নারজিওলে (৭৭)। আরোহীদের সবাই নিহত হন।
মার্কিন কোস্ট গার্ড তাদের অনুমানে জানায়, 'সাবমার্সিবলের দেহকাঠামোতে 'ক্যাটাস্ট্রফিক ইমপ্লোশন' বা 'ভয়াবহ ধরনের অন্তর্মুখী সংকোচনের' কারণে তাদের মৃত্যু হতে পারে।
এই অভিযানের আগেই বিভিন্ন সময় ওশানগেটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মীরাই টাইটান সাবমার্সিবল নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
বিবিসি এক ইমেইলে দেখতে পায়, ওশানগেটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী প্রয়াত স্টকটন রাশ একজন বিশেষজ্ঞের নিরাপত্তা উদ্বেগকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, 'উদ্ভাবন বন্ধের জন্য সুরক্ষা বিষয়ক যুক্তিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।'
তবে ট্রাইটন অভিযানের বিষয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে কনর বলেন, 'আমি বিশ্বব্যাপী মানুষকে দেখাতে চাই যে, মহাসাগর অত্যন্ত শক্তিশালী হলেও এটি চমৎকার ও উপভোগ্য হতে পারে এবং সত্যিকার অর্থেই জীবন বদলে দিতে পারে যদি আপনি সঠিক উপায়ে একে ব্যবহার করতে পারেন।'
ওশানগেট ডুবোযান বিস্ফোরিত হয়ে পাঁচজন মারা গেলে বেসরকারি সাবমার্সিবল শিল্প বড় ধরনের ধাক্কা খায়। এই জুটি আশা করেন যে, টাইটান বিপর্যয়ের পরে ক্ষতিগ্রস্ত বেসরকারি সাবমার্সিবল শিল্প আবার একটি সফল যাত্রার মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত হবে।
এই দুর্ঘটনার পর ওশানগেট তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোও অর্ডার বাতিল এবং বিক্রয় হ্রাসের কথা জানিয়েছে। লাহে বলেন, 'এই মর্মান্তিক ঘটনা ডুবোযানের প্রতি মানুষের আগ্রহকে কমিয়ে দিয়েছে।'
২০০৮ সালে ট্রাইটন সাবমেরিন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন লাহে। মি. কনর ওহাইওর ডেটনের কাছে অবস্থিত একটি রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ সংস্থা দ্য কনর গ্রুপের প্রধান।
২০২১ সালে, দুজনে মারিয়ানা ট্রেঞ্চের চ্যালেঞ্জার ডিপ এবং সিরেনা ডিপে একটি সাবমার্সিবলে একসাথে যাত্রা করেছিলেন। মারিয়ানা ট্রেঞ্চ পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর খাত। এর অবস্থান প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে। এর গভীরতম স্থানটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৬ হাজার ফুট নিচে অবস্থিত।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন