সুপার ওভারে পাকিস্তানকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে এগিয়ে গেল, তাতে কাঁপন জাগলো পাকিস্তানের মনে। হঠাৎ ম্যাচের বাঁক বদল হলো হারিস রউফ ও মোহাম্মদ আমিরের বোলিংয়ে। কিন্তু হার না মানা মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামা অ্যারন জোন্স ও নিতীশ কুমার দারুণ জুটি গড়ে ম্যাচ নিয়ে গেলেন সুপার ওভারে। যেখানে খেই হারালো পাকিস্তান, ব্যাটে হলে চরম হতাশার জন্ম দিলো তারা। আইসিসির সহযোগী দেশ, প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ুযুদ্ধে জিতলো, জিতলো শিরোপা প্রত্যাশী পাকিস্তানের বিপক্ষেও। রোমাঞ্চকর জয়ে ইতিহাস গড়লো বিশ্বকাপের সহ-আয়োজকরা।
বৃহস্পতিবার ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে দম বন্ধ করা ম্যাচে সুপার ওভারে পাকিস্তানকে হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই অংশ নিয়ে চমক জাগানো যুক্তরাষ্ট্রের এটা টানা দ্বিতীয় জয়। প্রথম ম্যাচে বড় লক্ষ্য তাড়া করে কানাডাকে হারিয়ে দেয় তারা। দুই জয়ে পরের রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনাও জাগিয়ে রাখলো বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রিকেটার নিয়ে দল গড়া যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আইসিসির পূর্ণ সদস্য দলের বিপক্ষে জিতলো তারা। এর আগে আয়ারল্যান্ড ও বাংলাদেশকে হারিয়েছেন অ্যারন জোন্স-মোনাঙ্ক প্যাটেলরা।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম ও শাদাব খানের চল্লিশোর্ধ ইনিংসে ৭ উইকেটে ১৫৯ রান তোলে। জবাবে অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেলের হাফ সেঞ্চুরি এবং আন্দ্রিয়েস গাউস ও অ্যারন জোন্সের লড়াইয়ে সমান ১৫৯ রান তোলে যুক্তরাষ্ট্র। সুপার ওভারে মোহাম্মদ আমিরের ভুলে ১৮ রান পায় তারা। এই রান পাড়ি দিতে নেমে যুক্তরাষ্ট্রের পেসার সৌরভ নেত্রভালকারের বিপক্ষে ১৩ রানের বেশি তুলতে পারেনি পাকিস্তান।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা মন্দ হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের। উদ্বোধনী জুটিতে ৫.১ ওভারে ৩৬ রান যোগ করেন স্টিভেন টেইলর ও মোনাঙ্ক প্যাটেল। ১৬ বলে ১২ রান করেন টেইলর। প্রথম উইকেট হারানোর চাপ অবশ্য বুঝতে হয়নি স্বাগতিক দেশটিকে। দ্বিতীয় উইকেটে ৪৮ বলে ৬৮ রানের জুটি গড়েন মোনাঙ্ক ও আদ্রিয়েস গাউস। এই জুটিতে মনে হচ্ছিল সহজেই জিতে যাবে যুক্তরাষ্ট্র।
কিন্তু ১৪তম ওভারে দারুণ এক ডেলিভারিতে গাউসকে ফিরিয়ে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন রউফ। কার্যকরী ইনিংস খেলা গাউস ২৬ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৫ রান করেন। কিছুক্ষণ পরে মোনাঙ্ককে ফিরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ আরও বাড়ান আমির। দলকে জয়ের পথে রাখা মার্কিন অধিনায়ক মোনাঙ্ক ৩৮ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কায় ৫০ রান করেন।
প্রচন্ড চাপের মাঝেও চতুর্থ জুটিতে লড়ে যান আগের ম্যাচের নায়ক অ্যারন জোন্স ও নিতীশ কুমার। এ দুজনের লড়াইয়ে জয়ের পথেই থাকে যুক্তরাষ্ট্র। শেষ ওভারে জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন দাঁড়ায় ১৫ রান। রউফের ওভার থেকে ১৪ রান তুলে খেলা সুপার ওভারে নিয়ে যান জোন্স ও নিতীশ।
সুপার ওভারে গিয়ে আমিরের ওপর ভরসা রাখে পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রের আশা-ভরসা কাঁধে চাপিয়ে উইকেটে যান জোন্স ও হারমিট সিং। দারুণ বোলিং করা আমির দলকে হতাশ করেন, তিনটি ওয়াইডসহ তার ওভার থেকে ৭টি বাই রান যায়। একটি চারসহ সব মিলিয়ে ১৮ রান তোলে যুক্তরাষ্ট্র। লক্ষ্য তাড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নেত্রাভালকারের বিপক্ষে ইফতিখার আহমেদ, শাদাব আহমেদ, ফকর জামানরা ১৩ রানের বেশি তুলতে পারেননি। যদিও অতিরিক্ত থেকেই আসে ৬ রান। মূল ম্যাচে পাকিস্তানের পক্ষে একটি করে উইকেট নেন আমির, নাসিম ও রউফ।
এর আগে ব্যাটিং করা পাকিস্তানের শুরুটা ভালো ছিল না। সৌরভ নেত্রাভালকারের দারুণ ডেলিভারি ভালোভাবে সামলাতে পারেননি মোহাম্মদ রিজওয়ান। ব্যাটের কানায় লেগে বল পেছনে চলে যায়। অসাধারণ এক ক্যাচে তাকে বিদায় করেন স্লিপে দাঁড়ানো স্টিভেন টেইলর। পরের উইকেটও টেকেনি, দলীয় ১৪ রানেই সাজঘরে ফেরেন উসমান খান।
পারেননি ফকর জামানও, যুক্তরাষ্ট্রের পেসার আলী খানের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৭ বলে ১১ রান করেন তিনি। ২৬ রানে ৩ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন অধিনায়ক বাবর আজম ও অলাউন্ডার সাদাব খান। চাপ কাটিয়ে দ্রুত রান তুলতে শুরু করেন তারা। ৪৮ বলে ৭২ রানের জুটি গড়েন বাবার ও শাদাব। ১৩তম ওভারে ভাঙে এই জুটি, ২৫ বলে একটি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪০ রান করেন করেন তিনি।
পরের বলেই ফিরে যান আজম খান, নসথুস কেনজিগের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে আবারও চাপে পড়ে পাকিস্তান। এরপর বাবর কিছুটা পথ এগিয়ে দলকে। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ২৫ বলে একটি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪০ রান করেন।
এরপরও পাকিস্তান ১৫৯ রানে পৌঁছায় ইফতিখার আহমেদ ও পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির ব্যাটে। ১৪ বলে ৩টি চারে ১৮ রান করেন ইফতেখার। ১৬ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন শাহিন আফ্রিদি। দারুণ বোলিং করা কেনজিগে ৪ ওভারে ৩০ রানে ৩টি উইকেট নেন। কিপটে বোলিং করা নেত্রাভালকার ৪ ওভারে ১৮ রানে ২টি উইকেট পান। একটি করে উইকেট নেন আলী খান ও জাসদীপ সিং।