নর্থ সাউথের সামনে পুলিশের তল্লাশি, আটক অন্তত ১৫
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে শিক্ষার্থীদের নিহত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচারসহ ৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের ডাকা আন্দোলনে সোমবার সকাল থেকেই বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইটে অবস্থান নিয়ে ব্যাপক তল্লাশি ও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সকাল ১১ টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত তিন নারী শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১৫ জনকে আটক করে প্রিজন ভ্যানে তুলতে দেখা গেছে। যদিও কতজনকে আটক করা হয়েছে – তা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।
টিবিএসের একজন প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নর্থ সাউথের তিন নম্বর ও আট নম্বর গেটের সামনে পুলিশকে অবস্থান করতে দেখেছেন। ৮ নং গেইটে এসময় পুলিশের গাড়িতে ১ জন নারী শিক্ষার্থীসহ মোট ৩ জনকে আটক রাখা হয়। এরপর বেলা বাড়ার সাথে সাথে আটকের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শী অন্যান্যরা জানান, শিক্ষার্থী পরিচয় পেলেই পুলিশ তাদের মুঠোফোন চেক করেছে।
আটককৃতদের মধ্যে শিক্ষার্থী ও পথচারী রয়েছেন। আটক কয়েকজনের দাবি, কেবল শিক্ষার্থী পরিচয় পেয়ে পুলিশ তাদের আটক করে।
আটককৃতদের মধ্যে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মাহাবুবুর রহমান বলেন, 'আমি গাড়ি ঠিক করাতে এসে বসুন্ধরার গেইট দিয়ে বের হয়ে বাসায় যাচ্ছিলাম। পুলিশ আমাকে জিজ্ঞেস করে, আমি কি করি? আমি বলেছি ইউআইইউর শিক্ষার্থী। তখন পুলিশ কিছু না বলেই আমাকে গাড়িতে তুলে।'
এসময় পুলিশ ভ্যানের পাশ থেকে ড্যাফোডিল কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, 'আমার এখনো ১৮ বছর হয়নি। আমি বাসায় যাচ্ছিলাম। পুলিশ আমাকে ধরেছে।'
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তাজদিদ রহমান খানের বাসা বসুন্ধরা এ ব্লকে। তিনি বলেন, 'আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। পুলিশ আমাকে দুটো থাপ্পড় দিয়ে গাড়িতে তোলে।' এসময় ইমন নামে নর্থ সাউথের আরেক শিক্ষার্থীকেও আটক করা হয়।
দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে বাজার নিয়ে রিক্সায় করে বাসায় ফিরছিলেন শাহীন রাজ। তাকেও পুলিশ আটক করে। তখন তিনি পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, ';আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন আপনারা!' তখন কয়েকজন পুলিশ শাহিনকে ভ্যানে উঠিয়ে ধমক দিয়ে বলেন, 'যান, পরে কথা কইয়েন।'
খবর পেয়ে এসময় ছুটে আসেন শাহীন রাজের মা রহিমা। তিনি কাঁদতে কাঁদতে রাস্তায় বসে পড়েন। এসময় তিনি বলেন, 'কি জন্য আমার ছেলেরে ধরল? আমার ছেলে তো পড়ে না। ওরে বাজারে কেবল পাঠাইছি। আমি অসুস্থ দেখে ও আমাকে বাজার করতে দেয় না। ইয়াং পোলাপান দেখলেই কি ধরা লাগবো? আমার ছেলে তো ইউনিভার্সিটিতেও পড়ে না।'
১টা ২৫ মিনিটের দিকে নর্থ সাউথের গেইটে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শর্মি হোসেন। তিনি পুলিশের কাছে আটককৃত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তালিকা চান। তিনি বলেন, 'আমরা পুলিশের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম, আমাদের শিক্ষার্থীরা কি ধরনের ভায়োলেন্স করেছে? তাদেরকে কেন আটক করেছেন? তারা উলটো আমাদের বলছে, আমরা কি উস্কানি দিতে এসেছি কি-না? আমরা ইউনিভার্সিটিতে কাজে এসেছি। এদিক দিয়ে যাওয়ার সময় বোঝার চেষ্টা করছিলাম যে, কী হচ্ছে?'
তিনি বলেন, 'আমরা আটকের এই ঘটনাকে ধিক্কার জানাই। শিক্ষার্থীদের আমাদের কাছে ফেরত দিতে হবে। আমাদের ছাত্রদের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করব। ছাত্রদের এইভাবে হয়রানি করার ঘটনায় আমরা অত্যন্ত ব্যথিত। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজে এসেছিলাম এসে এই ঘটনা দেখলাম। আনুমানিক ১০ থেকে ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটকদের মধ্যে নর্থ সাউথের কয়জন শিক্ষার্থী রয়েছেন– তা এখন পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না।'
১টা ২৮ মিনিটে আটক শিক্ষার্থীদের বহনকারী প্রিজন ভ্যানটি ক্যাম্পাস এলাকা থেকে চলে যায়।
সার্বিক বিষয়ে দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, 'নর্থ সাউথ বা বসুন্ধরা এলাকায় যেন কোন জামাত-শিবির চক্র বা বিএনপির সন্ত্রাসীরা কেউ জড়ো হতে না পারে, সেজন্য আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। কেউ যদি এখানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বা নাশকতা করতে চায়– তাহলে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
কতজনকে আটক করা হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'এটা এ মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না। তাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে আটক করা হয়েছে।'