আসামের এনআরসি: ভারতের রাষ্ট্রপতির পদক পাওয়া সুবেদার সানাউল্লাহ এখনও ‘ফরেনার’
৫২ বছর বয়সী মোহাম্মদ সানাউল্লাহ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৮৭ সালে। জুনিয়র কমিশনড অফিসার (জেসিও) হিসেবে অবসর নেবার আগে প্রেসিডেন্টের মেডেলও পেয়েছিলেন। তাঁর সার্ভিস ডিসচার্জ বুকে দুটো জায়গায় কাজের উল্লেখ রয়েছে; জম্মু ও কাশ্মীর এবং মণিপুর।
আসাম সরকারের কর্মকর্তা চন্দ্রমাল দাশ সানাউল্লাহকে ‘ফরেনার’ হিসেবে অভিহিত করে একটি তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেন ২০০৮ সালে। সেটিতে সানাউল্লাহকে বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া ‘শ্রমিক’ হিসেবে অভিহিত করেন। সানাউল্লাহর নামটি ‘ডি’ (ডাউটফুল) ভোটার তালিকায় যুক্ত করা হয়।
এ রিপোর্টের ভিত্তিতে সানাউল্লাহকে নোটিশ দেওয়া হয় যেখানে তাঁকে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে বলা হয়েছিল।
হিন্দুস্তান টাইমস জানাচ্ছে, ২০১৮ সালে কামরূপের ফরেনারস ট্রাইব্যুনালে (এফটি) হাজির হন সানাউল্লাহ। সেখানেই ২৩ মে তাঁকে ‘ফরেনার’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তারপর গোয়ালপাড়ায় ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সানাউল্লাহর ডিটেনশনের খবর পত্রিকার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর চন্দ্রমাল দাশ, যিনি প্রথম তদন্ত করেছিলেন, ততদিনে তিনি অবসরে গেছেন—জানালেন যে ব্যক্তিকে নিয়ে তিনি তদন্ত করেছিলেন, ডিটেনসনে যাওয়া ব্যক্তি সে জন নন।
গুয়াহাটি হাই কোর্টে পরে তাঁর জামিন মঞ্জুর হয়। কিন্তু কোর্ট ফরেনারস ট্রাইব্যুনালের আগের আদেশটি বাতিল না করে জানান যে, তাঁর পিটিশনটির শুনানি চলবে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের প্রকৃত নাগরিকদের নামের তালিকা (এনআরসি) থেকে বাদ পড়েছে ১৯ লাখের বেশি মানুষের নাম। শনিবার সকালে প্রকাশিত তালিকায় চূড়ান্তভাবে ঠাঁই হয়েছে ৩ কোটি ১১ লাখ মানুষের নাম। সেখানে সানাউল্লাহর নাম নেই। তিনি এখনও ‘ফরেনার’।
সানাউল্লাহ আশাবাদী ছিলেন যে, ‘শেষ মুহর্তে হলেও’ এনআরসির ‘ফরেনার’ তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ যাবে। হল না সেটাও।
তাঁর মেয়ে শাহনাজ আখতার ও হিলমিনা আখতারের নামও নেই। নেই ছেলে সাঈদ আখতারের নাম।
গত সপ্তাহে এনআরসি সেবা কেন্দ্রে তাঁকে ডাকাও হয়েছিল। বলা হয়েছিল ফরেনারস ট্রাইব্যুনালের মতামতের কাগজপত্র জমা দিতে। ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে পাওয়া জামিনের আদেশের কপিও দিতে বলা হয়।
সব জমা দেবার পর খানিকটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছিলেন সাবেক এই সেনা-সদস্য।
হাই কোর্টে দায়েরকৃত আবেদনের ফয়সালার ওপরই তাই এখন নির্ভর করছেন সানাউল্লাহ। সেখানে স্থগিত থাকা তাঁর আবেদনটির ফয়সালা হওয়া অব্দি অপেক্ষা করবেন। তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন কী করা যায়।