ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত শেষ হয়ে যাবে: সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ওয়েন মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপোবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতলে দীর্ঘদিন ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হবে।
তিনি তার অভিজ্ঞতার আলোকে জানান, ক্ষমতায় আসলে ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধের নিষ্পত্তি এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করবেন। এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
সম্প্রতি আল-জাজিরা ৮৬ বছর বয়সী ওয়েনের সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মস্কোর চূড়ান্ত সম্পর্ক এবং কেন তিনি মনে করেন নভেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পরবর্তীতে কী হবে তা নির্ধারণ করবে-এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছে।
১৯৭০ এর শেষের দিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ওয়েন। তিনি ২৬ বছর ধরে লেবার এমপি হিসেবে কাজ করেছেন এবং হাউস অব লর্ডসেরও সদস্য ছিলেন। তিনি সাবেক যুগোস্লাভিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য শান্তি আলোচনা করতে কাজ করেছেন।
ওয়েন ২০২১ সালে তার 'রিডল, মিস্ট্রি অ্যান্ড এনজাইম: টু হানড্রেড ইয়ার্স অব ব্রিটিশ-রাশিয়ান রিলেশনস'-বইটি প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পরে তিনি বইটির নতুন সংস্করণ প্রকাশ করেন।
ডেভিড ওয়েন সবসময়ই ইউক্রেন যুদ্ধকে রাশিয়ার 'দ্বিতীয়বার আগ্রাসন'-হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি ২০১৪ সালের ক্রিমিয়ার সংঘাতকে রাশিয়ার প্রথম আগ্রাসন বলে থাকেন।
আল-জাজিরা তাকে জিজ্ঞেস করে, ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর; আপনি ফাইনান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেন, যাতে রাশিয়ার সঙ্গে একটি নতুন ন্যাটো চুক্তির দাবি জানানো হয়, দুই পক্ষের শত্রুতা যাতে না বাড়ে এটা ছিল উদ্দেশ্য। যুদ্ধের প্রায় এক হাজার দিন পার হতে চলেছে, ন্যাটো রাশিয়ার কাছে আরও কাছাকাছি পৌঁছে গেছে এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের সতর্কতা দিচ্ছেন। আপনি কি এখনও সেই চিঠির পক্ষে আছেন?
এর জবাবে ডেভিড ওয়েন বলেন, আমি মনে করি দুই পক্ষের [রাশিয়া ও পশ্চিমারা, ন্যাটো] সম্পর্কের গুরুতর অবনতি হয়েছে। আমি নিজেও মনে করি না ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত, ইয়েলৎসিনের [সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস নিকোলায়েভিচ ইয়েলৎসিন] আমলে আমরা যে ফলপ্রসূ সংলাপে ছিলাম, তাতে ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে।
আমি মনে করি, এটা অনেকটাই নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে জয়ী হবেন তার ওপর। যদি রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসেন, তাহলে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের নিষ্পত্তি এবং পুতিনের [রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন] সঙ্গে সম্পর্ক ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করবেন; তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
এরপর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, রাশিয়ার অভ্যন্তরে আঘাত হানতে ইউক্রেন পশ্চিমাদের তৈরি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের কি ইউক্রেনের এই ইচ্ছা পূরণ করা উচিত?
এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবকিছু (মার্কিন) প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাতে। এখন পর্যন্ত আমেরিকা কি করবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তার এবং এ বিষয়ে তিনি যথেষ্ট সচেতন। এটা স্পষ্ট, বর্তমান পরিস্থিতিতে উত্তেজনা আর না বাড়াতে, ইউক্রেনের ন্যাটোর সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে বাইডেন চরম অনিচ্ছুক।
এরপর তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কখন আপনার কাছে এটা স্পষ্ট হলো যে, যুক্তরাজ্য-রাশিয়া সম্পর্ক স্নায়ুযুদ্ধের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে?
ওয়েন বলেন, আমি মনে করি এটি ইউক্রেনে রাশিয়ার দ্বিতীয় আগ্রাসন ছিল। প্রথম আগ্রাসনের পর [২০১৪ সালে] রাশিয়া নিশ্চয়ই জানতো বিশ্ববাসীর কাছে তার এ পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য না। তবে সেসময় আমরা হয়তো রাশিয়াকে যথেষ্ট কঠোর জবাব দিতে পারিনি। তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ফরাসিদের মধ্যে এই আলোচনা হয়েছিল। ব্রিটিশরা প্রাথমিকভাবে সেই সংলাপে জড়িত ছিল না। তাই হয়তো পুতিন ইউক্রেনে আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো কীভাবে দেবে তা অবমূল্যায়ন করেছিলেন।
আল জাজিরা আরও জানতে চায়, গত কয়েক বছরে পুতিনকে আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার পরে, যুদ্ধ শেষ করার জন্য মীমাংসার ক্ষেত্রে আমরা তার কাছ থেকে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া আশা করব?
ওয়েন বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বিচার করতে হবে তিনি রাশিয়াকে কীভাবে সামলান, তার ভিত্তিতে। ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের নেতৃত্বে রুশ সেনাদের বিদ্রোহের মুখে পড়েন এই ব্যক্তি। তারা [বিদ্রোহীরা] মস্কো অভিমুখে পদযাত্রা করেছিল, শেষ পর্যন্ত তিনি [পুতিন] অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে বিষয়টি সামলেছিলেন। পুতিন নিজে কিছুই করেননি। তিনি শুধু অপেক্ষা করছিলেন... শেষমেশ তিনি যা চেয়েছিলেন ঠিক তাই পেয়েছেন। এজন্য সম্ভবত সাত-আট মাস সময় লেগেছিল। তিনি [পুতিন] একজন সতর্ক মানুষ। তাই আমি মনে করি তার প্রতি আমাদের সম্মান দেখানো উচিত।
তিনি আরও বলেন, তিনি রাশিয়ার নেতা এবং এই মুহূর্তে তার নেতৃত্বে নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। তিনি সম্ভবত আরও পাঁচ, ১০ বা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকবেন। তাই আলোচনার সময় আমাদের উচিত তাকে সম্মানের সঙ্গে বিবেচনা করা এবং আমি বিশ্বাস করি আমরা এই সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারব। আমরা কিছু ভুল করেছি, তিনিও ভুল করেছেন, কিন্তু আমি এই অন্তহীন যুদ্ধে বিশ্বাস করি না।
ভাবানুুুবাদ: তাবাসসুম সুইটি