টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ১৮ বছর
দীর্ঘ ১৮ বছর পার হয়ে গেছে টুইন টাওয়ার ধ্বংস হবার। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বোয়িং৭৬৭ বিমানটি প্রায় ২০ হাজার গ্যালন জেট ফুয়েল নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র বা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নর্থ টাওয়ারে আঘাত হানে।
১১০তলা ভবনের ৮০তম তলায় বিমানটি আঘাত হানে। মুহূর্তের মধ্যেই কয়েক'শ মানুষ নিহত হন। বহু মানুষ আটকা পড়েন ভবনের বিভিন্ন স্থানে।
৪টি বিমান ওই হামলায় অংশ নিয়েছিল। দুটি বিমানের লক্ষ্য ছিল নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর ও দক্ষিণ টাওয়ার। অন্য একটি বিমান আঘাত হেনেছিল পেন্টাগনে, যেটির অবস্থান ওয়াশিংটনের ঠিক বাইরেই। আর চতুর্থ বিমানটি আছড়ে পড়েছিল পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে।
ঐ হামলায় তিন হাজারের মতো মানুষ নিহত হয়েছিলেন। আহত হন আরও ১০ হাজারের মতো মানুষ। তাদের অনেকের অবস্থাই ছিল গুরুতর। নিহতদের মধ্যে চার শ'য়ের বেশি ছিলেন পুলিশ এবং দমকলকর্মীর সদস্যরা। যুক্তরাষ্ট্রের দমকলকর্মীদের জন্য এটিই হয়তো ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দিন।
সময় পেরিয়ে গেছে, কিন্তু ঐদিন যারা প্রাণ হারিয়েছিলেন তাদের প্রিয়জনদের মনে আজও দগদগে ঘায়ের মতো জেগে আছে ভয়াবহ সেই স্মৃতি।
আর শুধু তারাই নয়। এই ঘটনার পরই আফগানিস্তানে আর ইরাকে আক্রমণ শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যে আগুন জ্বলছে এখনও। ধ্বংস হয়ে গেছে দেশগুলো।
এখানে টুইন টাওয়ার ধ্বংসের সময়কার ১০ টি ছবি দেয়া হলো, সেদিনটির ভয়াবহতা স্মরণ করিয়ে দেবে আমাদের।
১। দুইটি জেট বিমানের আক্রমণ ছিল ভয়াবহ। লোহার কাঠামো ভেঙ্গে আগুন ধরে যায় বিশাল দুই ভবনে। এবং এক পর্যায়ে মাটিতে দেবে যায় ভবন দু’টি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত ফ্লাইট বাতিল করা হয় সেদিন।
২। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ একটা স্কুলের অনুষ্ঠানে ছিলেন সেদিন। তার মুখের অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছে কি ভয়ানক ব্যাপার ঘটে গেছে।
৩। হাজার হাজার মানুষ আটকে পড়েছিলেন ভবনের উপরের তলাগুলোয়। বিমান আক্রমনের সঙ্গে সঙ্গেই নিহত হন অনেকে। আর অনেকেই মারা যান আগুনে পুড়ে। কেউ কেউ লাফিয়ে পড়েন আগুনের কাছ থেকে বাঁচতে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মারা যান তারাও।
৪। খবর পাবার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়েছিলেন নিউইয়র্ক শহরের ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। জ্বলন্ত ভবন থেকে মানুষদের রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হন তাদের ৩৪৩ কর্মী।
৫। নিউ ইয়র্ক ফায়ার সার্ভিসের সদস্য রেভারেন্ড মাইকেল জাজ,ভবনে আটকে পড়া মানুষদের বাঁচাতে গিয়ে নিজেই মারা যান ধসে পড়া কংক্রিটের আঘাতে।
৬। অভাবনীয় নকশার টুইন টাওয়ার, যার কিছুই প্রায় আর অবশিষ্ট নেই। স্থপতি মিনোরু ইয়ামাসাকি এর নকশা করেছিলেন সরু-লম্বাটে জানালা আর উর্ধ্বমুখী রাজকীয় খিলান দিয়ে।
৭। ১১০ তলার দুইটি বিশাল ভবন, শেষ পর্যন্ত যা পরিণত হয়েছিল স্রেফ লোহার পিন্ডে। মাসের পর মাস ধরে মিস্ত্রীদের এই লোহার পিন্ড কেটে কেটে আলাদা করতে হয়েছিল, যাতে বহন করে সরিয়ে ফেলা যায়।
৮। পরিবার আর কাছের ভালোবাসার জনেরা টাঙ্গিয়ে দিয়েছেন হারিয়ে যাওয়া প্রিয় জনের ছবি, এই আশায় হয়তো ফিরে আসবে তারা কোনদিন।
৯। শুধু নিউইয়র্কেই নয়, আক্রমণ হয়েছিল পেন্টাগন ভবনেও- যেখানে নিহত হন ১২৫ জন।
১০। প্রতিবছর সেই স্থানে জ্বালানো হয় উর্ধ্বমুখী দুইটি আলোর রশ্মি ‘ট্রিবিউট ইন লাইটস’, নিউইয়র্ক আর বিশ্ববাসীদের স্মরণ করিয়ে দেয় - ম্যানহ্যাটনের এখানেই একসময় দাঁড়িয়ে ছিল টুইন টাওয়ার। ৯/১১’র বিষাদময় ভয়াবহ দিনটিতে ধ্বংস হয়ে যায় ভবন দুইটি, সঙ্গে করে নিয়ে যায় শত শত প্রাণ।
৯/১১’র দিনটি তো ভুলবার নয়, পৃথিবীর রাজনীতির পটপরিবর্তন করে দিয়েছিল এই ঘটনা। পালটে দিয়েছিল লাখ লাখ মানুষের জীবন। সেদিন যারা নিহত হয়েছিলেন তাদের স্মরণ করি আমরা, আর আশা করি একদিন পৃথিবীর এই আগুন নিভে যাবে, রূপকথার গল্পের মতো একদিন সত্যি সত্যিই সুখে শান্তিতে থাকবে মানুষ।