ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া পক্ষে ১ লাখ সৈন্য পাঠাতে পারে উত্তর কোরিয়া
ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে উত্তর কোরিয়া প্রায় এক লাখ সৈন্য পাঠাতে পারে। তবে পুরোটাই নির্ভর করছে পিয়ংইয়ং ও মস্কোর মধ্যে সম্পর্কের ধারাবাহিকতার ওপর। জি২০ গ্রুপের এক পর্যালোচনায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
এই পর্যালোচনার সাথে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্লুমবার্গ। যেখানে ভ্লাদিমির পুতিন ও কিম জংয়ের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়।
সূত্র জানায়, উত্তর কোরিয়া থেকে সৈন্য পাঠানোর প্রক্রিয়াটি ধীরে ধীরে হবে। চলতি মাসের শুরুতেও ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এমন আশঙ্কা জানানো হয়েছিল।
এর আগে ভয়েজ অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত দিমিত্র পনোমারেনকো বলেন, "রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে উত্তর কোরিয়ার ১৫ হাজারের বেশি সৈন্য পাঠানোর আশঙ্কা করছে কিয়েভ।"
সূত্র জানায়, এত বেশি পরিমাণ সৈন্য পাঠানোর বিষয়টি নির্দেশ করে যে, পুতিন হয়তো লম্বা সময়ের জন্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও এই বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রেসিডেন্সিয়াল অফিস কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ার সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্তে ইউক্রেন বেশ নড়েচড়ে বসেছে। এতে করে সংঘাত আরও ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেশটি মনে করে, বিষয়টি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তাজনিত ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। যেখানে ইতোমধ্যেই চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উত্তর কোরিয়ার সৈন্য পাঠানোর বিষয়টি চলতি সপ্তাহে ব্রাজিলে অনুষ্ঠাতব্য জি-২০ সামিটে আলোচনা করা হবে। যেখানে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাক্ষাতের কথা রয়েছে।
এর আগে গত শুক্রবার ওলাফ শলৎস ও পুতিনের মধ্যে টেলিফোনে কথোপকথন হয়েছে। সেখানেও উত্তর কোরিয়ার সৈন্য পাঠানোর বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত ইউক্রেন যুদ্ধকে আরও বৈশ্বিক রূপ দেবে। বিষয়টি নিয়ে গত সপ্তাহে পেরুতে আয়োজিত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা ফোরামের নেতারাও আলোচনা করেছেন।
শি জিনপিং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পুতিন ও কিমের অনেকটা মিত্র হিসেবে কাজ করেছে। মূলত মার্কিন পরাশক্তির বিরুদ্ধে তারা অনেকটা একে অপরের সহযোগী। কিন্তু রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়ার সৈন্য পাঠানোর বিষয়ে বেইজিং এখনো পর্যন্ত নীরব ভূমিকায় রয়েছে। এক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট অসন্তুষ্ট বলেও অনেক বিশ্লেষক ধারণা করছেন।
রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে এখন পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি সৈন্য পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া। যেখানে গত আগস্টে চমকপ্রদভাবে একটি বৃহৎ অঞ্চল নিজেদের আয়ত্তে এনেছিল ইউক্রেন।
সৈন্য পাঠানোর পাশাপাশি উত্তর কোরিয়া রাশিয়ায় লাখ লাখ রাউন্ড আর্টিলারি গোলাবারুদ ও অন্যান্য অস্ত্র পাঠিয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস চলতি সপ্তাহে ইউক্রেনের গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে যে, পিয়ংইয়ং মস্কোকে দূরপাল্লার রকেট ও আর্টিলারি সিস্টেমও সরবরাহ করেছে।
এদিকে সম্প্রতি ইউক্রেনকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। একজন মার্কিন কর্মকর্তা সিবিএস নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে ওয়াশিংটনের নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কয়েক মাস ধরে এটিএসিএমএস নামক এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। যাতে কিয়েভ তার নিজ সীমান্তের বাইরে হামলা করতে পারে।