আইনজীবীদের সিন্ডিকেটের কারণে আইনি ব্যয় বাড়ছে: আইসিটির প্রধান কৌঁসুলি
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের একটি সিন্ডিকেটের কারণে বাংলাদেশে আইনি ব্যয় উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রধান প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. তাজুল ইসলাম।
আজ সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত 'ডায়ালগ ফর ডেমোক্রেটিক রিকনস্ট্রাকশন-অন জুডিসিয়ারি' শীর্ষক সংলাপে তাজুল ইসলাম এ কথা বলেন।
বিচার বিভাগের অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তাজুল ইসলাম বলেন, 'একজন নিয়মিত আইনজীবীর পারিশ্রমিক ২০ হাজার টাকা হতে পারে। কিন্তু আদালতে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের কারণে অনেক সময় বিচারপ্রার্থীরা সিন্ডিকেট আইনজীবী নিয়োগ দিতে বাধ্য হন, যারা জামিন পেতে বা অনুকূল ফলাফলের জন্য পাঁচ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক নেন।'
এ রকম অত্যধিক ব্যয় বহন করতে অক্ষমদের অসুবিধার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'সাধারণ আইনজীবীদের পরিচালিত মামলাগুলো সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম।'
তাজুল ইসলাম অভিযোগ করেন, সাধারণ আইনজীবীরা মক্কেলদের নিরাপত্তা দিতে না পেরে ক্রমেই দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন।
জামিন আবেদনের তালিকা দ্রুত করতে ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ গ্রহণ করায় বেঞ্চ কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেন তিনি।
তিনি উল্লেখ করেন, 'ঘুষ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে রায় দিতে তিন বছর দেরি হয়েছে, এমন উদাহরণ আমি দেখেছি। বিচারকদের রাজনৈতিক নিয়োগ বিচার বিভাগের মধ্যে দুর্নীতিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বিচার ব্যবস্থাকে যখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, তখন বিচারকরা পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন।'
এস আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত বন্ধে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, 'সুপ্রিম কোর্ট কেন ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করল? এ সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হবে।'
মামলা জট
বিচার ব্যবস্থায় মামলার জট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাজুল ইসলাম বর্ণনা করেন, কীভাবে অ্যানেক্স ভবনের বাথরুমের সামনের জায়গাসহ অপর্যাপ্ত জায়গায় ফাইল এলোমেলোভাবে সংরক্ষণ করা হয়।
তিনি দক্ষতা বাড়াতে মামলা ব্যবস্থাপনাকে জরুরি ভিত্তিতে ডিজিটালাইজেশনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'বর্তমানে নতুন করে মামলা না হলেও ঝুলে থাকা মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে কমপক্ষে ৩০ বছর সময় লাগবে।'
বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রসিকিউটর।
তিনি দুর্নীতি মোকাবিলা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং অদক্ষতায় জর্জরিত বিচার ব্যবস্থার সমস্যা কাটিয়ে উঠতে কর্তৃপক্ষকে ডিজিটাল সমাধান গ্রহণের আহ্বান জানান।