ঢাকা বিমানবন্দরে পাখির আঘাতের হার বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি, আশঙ্কা প্রকাশ এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের
ঢাকা বিমানবন্দরে পাখির ধাক্কায় বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিমান চলাচল সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আয়োজিত 'রিসেন্ট এভিয়েশন ডিজাস্টারস অ্যান্ড দ্য কোয়েস্ট ফর আ সেফার স্কাই' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তারা এ বিষয়ক উদ্বেগ তুলে ধরেন।
সম্প্রতি, দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিমান ১৮১ জন যাত্রী নিয়ে মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়। প্রাথমিক তদন্তে পাখির আঘাত এবং খারাপ আবহাওয়াকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর বিমান চলাচলের নিরাপত্তা আরও জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা নতুন করে গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাখির আঘাতের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের হেড অব সেফটি এ এ এম শামসুজ্জামান বলেন, 'ঢাকা বিমানবন্দরে পাখির আঘাতের হার বিশ্বব্যাপী গড়ের তুলনায় অনেক বেশি। যেখানে বিশ্বের গড়প্রতি এক হাজার ফ্লাইটে ঝুঁকি ০.৫, সেখানে ঢাকায় এ হার ১.৭৩।'
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল হক বেগ জানান, বিমানবন্দরের আশপাশের জলাশয়ে মাছ ও পোকামাকড়ের প্রাচুর্য পাখিদের আকর্ষণ করে। এছাড়া, রানওয়ের সবুজ ঘাস ও খাবারের বর্জ্যও পাখিদের উপস্থিতি বাড়িয়ে দেয়।
তিনি আরও বলেন, 'জলাশয়ে মাছ না থাকার ব্যবস্থা করা গেলে পাখিদের আকর্ষণ কমানো সম্ভব। এছাড়া যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।"
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা জানান, শীতকালে পাখির আঘাতের ঝুঁকি বাড়ে। যদিও ঢাকা বিমানবন্দরে পাখি তাড়ানোর জন্য বার্ড শ্যুটার ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে বিশেষ ফল পাওয়া যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিমান টেকঅফের সময় ইঞ্জিনে পাখি ঢুকে গেলে বিমানে বড় ক্ষতি হতে পারে। এতে ইঞ্জিন অচল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় এবং বিমান নিয়ন্ত্রণ করতে পাইলটকে বেগ পেতে হয়
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিমানবন্দরের আশপাশে ৮০-৮২ শতাংশ পাখি কালো-ডানা চিল। 'আমরা তাদের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করছি, তবে এটি বেশ চ্যালেঞ্জিং।'
তিনি জানান, পাখি নিয়ন্ত্রণের জন্য সক্রিয় ও পরোক্ষ উভয় ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সক্রিয় ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে বার্ড শ্যুটার ব্যবহার। পরোক্ষ ব্যবস্থায় সনাক্তকরণ ব্যবস্থা, শব্দ নিরোধক, লেজার বন্দুক ও শব্দতরঙ্গের ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ গত চার বছরে পাখির আঘাতে অন্তত সাতটি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের লন্ডনগামী ড্রিমলাইনারও। সম্প্রতি শাহজালাল বিমানবন্দরে একদিনে দুটি আলাদা পাখির আঘাতের ঘটনা ঘটে। এতে বিমান ও ফ্লাইদুবাই-এর দুটি ফ্লাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এছাড়া, সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পাখির আঘাতে একটি বিমান জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মনজুর কবির ভূঁইয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, 'আমরা জানি, এসব দুর্ঘটনা মানুষের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। তবে আমরা প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছি যাতে আকাশপথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।'
তিনি আরও বলেন, 'এভিয়েশন নিরাপত্তা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত বর্ধনশীল এভিয়েশন শিল্পে নিরাপত্তা ঝুঁকি কমানো ক্রমশই কঠিন হয়ে উঠছে। তবে এ ঝুঁকিগুলো মোকাবিলা করতে হবে।'
এছাড়া, সেফটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বাস্তবায়নের জন্য এয়ারলাইনগুলোকে 'ন্যায় সংস্কৃতি' গ্রহণ করারও আহ্বান জানান তিনি।