এনডিবির সদস্য হতে বাংলাদেশের সমর্থন চেয়ে পাকিস্তানের চিঠি
বহুজাতিক আর্থিক সংস্থা দ্য নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি)-র সদস্য হতে বাংলাদেশের সমর্থন চায় পাকিস্তান। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রী আহাদ খান চীমা সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে এক চিঠিতে এ সহযোগিতা চেয়েছেন।
১ জানুয়ারি ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশন আহাদ খান চীমার লেখা চিঠি বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। টিবিএসের প্রতিনিধি ওই চিঠি দেখেছে।
ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশন থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সম্মানীয় অর্থ মন্ত্রণালয়কে শুভেচ্ছা জানিয়ে ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক পাকিস্তানের হাইকমিশন অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রী আহাদ খান চীমার চিঠিটি পেশ করছে, দ্য নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্যপদ লাভে বাংলাদেশের সমর্থন পেতে যা বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় অর্থ উপদেষ্টাকে তিনি দিয়েছেন।
এনডিবির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের মার্চে পঞ্চম ব্রিকস সম্মেলনে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। এই পাঁচ দেশ ব্যাংকটির উদ্যোক্তা। এরপর ২০১৫ সালে এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। চীনের সাংহাই শহরে এনডিবির সদর দফতর অবস্থিত। এর মূল উদ্দেশ্য সদস্য দেশগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ সহযোগিতা করা এবং টেকসই উন্নয়নে বিনিয়োগ।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ এই ব্যাংকের সদস্য হয়েছে। ওই বছর অক্টোবরে সংযুক্ত আরব আমিরাত সদস্য হয়। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সদস্য হয়েছে মিশর। এছাড়া উরুগুয়ে সম্ভাব্য সদস্য দেশের তালিকায় রয়েছে। জাতিসংঘের সদস্য সকল দেশের জন্য এই ব্যাংক সদস্যপদ উন্মুক্ত রেখেছে।
ব্যাংকটির নবম বার্ষিক সম্মেলন গত বছরের ২৯ থেকে ৩১ আগষ্ট দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত বছরের ৫ আগষ্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ৮ আগষ্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর থেকে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আগের তুলনায় ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।
গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার আহমদ মারুফ জানান, পাকিস্তান যেতে ভিসা ফি লাগবে না বাংলাদেশি নাগরিকদের। পাকিস্তানের নতুন ভিসা নীতিমালা অনুযায়ী ১২৬টি দেশের মতো বাংলাদেশও এই সুবিধা পাবে।
সম্প্রতি পাকিস্তানের করাচি থেকে দুটি কনটেইনার বহনকারী জাহাজ সরাসরি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য নিয়ে এসেছে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এবারই প্রথমবারের মতো সরাসরি জাহাজ করাচি থেকে চট্টগ্রাম আসলো। দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানিও আগের তুলনায় গত কয়েক মাসে বেড়েছে।
বাংলাদেশ সফর করছেন পাকিস্তানের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। সম্প্রতি ট্রেডিং কর্পোরেশন অব পাকিস্তানের (টিসিপি) প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেছেন। গত সোমবার বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয় পাকিস্তানের কাছ থেকে ৫০ হাজার টন আতপ চাল আমদানির জন্য টিসিপির প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠক করেছে।
আগামীকাল ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে পাকিস্তানের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন– ফেডারেশন অব পাকিস্তান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের (এফপিসিসিআই) ২৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের। এই প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন– ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এক চিঠিতে পাকিস্তানের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছে।
এই প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের সাথে সাক্ষাৎ করবেন বলে পাকিস্তান হাইকমিশনের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। তারপর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে দুই দেশ একসাথে থাকলেও – একে-অপরকে সহযোগিতার উষ্ণ সম্পর্ক তেমন দেখা যায়নি।