সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা ট্রাম্পের, বাতিল করলেন আশ্রয় আবেদন অ্যাপ
হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে বসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এসব আদেশ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অংশ। খবর বিবিসি'র।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সংজ্ঞা নিয়ে আদেশ থেকে শুরু করে সীমান্তে অবৈধ অভিবাসনকে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা– ট্রাম্প তার প্রতিশ্রুত পদক্ষেপগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন শুরু করেছেন। তবে, বিশেষ করে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সংজ্ঞা পরিবর্তনের আদেশ আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নতুন প্রশাসনের সিদ্ধান্তে কয়েক ঘণ্টা আগেই সীমান্তে প্রবেশ পয়েন্টে আশ্রয় আবেদন সংক্রান্ত অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করার জন্য ব্যবহৃত সিবিপি ওয়ান অ্যাপ বাতিল করা হয়। ফলে হাজারো অভিবাসনপ্রত্যাশীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল হয়ে যায়।
অভিষেক বক্তৃতায় ট্রাম্প বলেন, "সব অবৈধ প্রবেশ বন্ধ করা হবে" এবং লক্ষাধিক "অপরাধী বিদেশি" ব্যক্তিকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। একইসঙ্গে, তিনি মেক্সিকোর মাদক কার্টেলগুলোকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দেন।
এর আগে ওয়াশিংটনের ক্যাপিটাল ওয়ান এরিনার এক অনুষ্ঠানে তিনি বাইডেন প্রশাসনের প্রায় ৮০টি নির্বাহী পদক্ষেপ আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করেন এবং সেগুলোকে তিনি "চরমপন্থি" বলে উল্লেখ করেন।
মার্কিন ক্যাপিটলে অভিষেক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, "আমার সর্বোচ্চ দায়িত্ব দেশকে হুমকি ও আগ্রাসন থেকে রক্ষা করা।"
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, ট্রাম্প প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে সীমান্ত "সিল" করার নির্দেশ দেবেন এবং অতিরিক্ত সম্পদ ও কর্মী নিয়োগ করবেন। এর মধ্যে ড্রোনবিরোধী প্রযুক্তিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, তাদের নেওয়া পদক্ষেপগুলো "সাধারণ জ্ঞানভিত্তিক অভিবাসন নীতির" সূচনা।
যদিও আদেশের বিস্তারিত তথ্য এখনো জানা যায়নি, কর্মকর্তাদের মতে, ট্রাম্প জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের নীতি বাতিল করার পরিকল্পনা করেছেন। এর মানে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অনথিভুক্ত অভিবাসীদের সন্তানরা আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না।
তবে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের নীতি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত এবং তা পরিবর্তন করতে কংগ্রেসের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন। ট্রাম্প কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করবেন, সে বিষয়ে কর্মকর্তারা কোনো বাড়তি তথ্য দেননি।
ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে সিবিপি ওয়ান অ্যাপ বাতিল করেছে। এই মোবাইল অ্যাপটি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সীমান্তে প্রবেশ পয়েন্টে উপস্থিতির অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে ব্যবহৃত হতো।
বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে চালু হওয়া এই অ্যাপ সীমান্তে আটকের সংখ্যা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এটি যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে আশ্রয়ের আবেদন করার একমাত্র বৈধ মাধ্যম ছিল।
তবে এখন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি) এর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, অ্যাপটি আর "বন্ধ হয়ে গেছে।" অ্যাপ ব্যবহারকারীদের একটি বার্তা দেখানো হচ্ছে যেখানে বলা হয়েছে, "সিবিপি ওয়ান-এর মাধ্যমে নির্ধারিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট আর বৈধ নয়।"
সিবিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, বাইডেন প্রশাসন সিবিপি ওয়ান-এর মাধ্যমে আগামী তিন সপ্তাহে প্রায় ৩০ হাজার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারণ করেছিল। অন্য হিসাব বলছে, মেক্সিকোতে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী এই অ্যাপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন।মেক্সিকোর সীমান্ত শহর তিজুয়ানায় অনেকে সিবিপি ওয়ান বন্ধ হওয়ার খবর শুনে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
নিজের হতাশা প্রকাশ করে ওরালিয়া নামের এক মেক্সিকান নারী বলেন, "আমি আশা করি, ঈশ্বর তার (ট্রাম্পের) হৃদয় স্পর্শ করবেন। আমাদের সত্যিই সাহায্যের প্রয়োজন।" তিনি মাদক কার্টেলের সহিংসতা থেকে পালিয়ে তার মৃগী রোগী ছেলেকে নিয়ে নিরাপত্তার খোঁজে ছিলেন। সিবিপি ওয়ান-এর মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার অপেক্ষায় তিনি সাত মাস ধরে অপেক্ষা করছিলেন।
সিবিপি ওয়ান অ্যাপ বাতিলের ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) আদালতে নথি দাখিল করে বিষয়টি নিয়ে জরুরি শুনানির আবেদন জানিয়েছে।
অভিবাসন অধিকার সংস্থাগুলো ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন ফোরামের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও জেনি মারে এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই আদেশগুলো "হতাশাজনক কিন্তু অপ্রত্যাশিত নয়।" তিনি আরও বলেন, "এই আদেশগুলো পরিবারগুলোকে আলাদা করবে এবং আমাদের অর্থনীতি দুর্বল করবে। এগুলো আমেরিকান মূল্যবোধকে সমুন্নত করে না।"
ইউনাইটেড উই ড্রিম নামের জাতীয় অভিবাসী যুব সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক গ্রেইসা মার্টিনেজ রোজাস বলেছেন, এই আদেশগুলো দেখায় যে প্রশাসন "পরবর্তী চার বছর আমাদের জীবন ধ্বংস করার চেষ্টা করবে।"
তিনি আরও বলেন, "ট্রাম্পের গণহারে অভিযান ও নির্বাসনের প্রতিশ্রুতি জাতীয়ভাবে সম্প্রদায়গুলোর ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলবে। এতে লক্ষ লক্ষ পরিবার ও ব্যক্তি বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়বে, যদি আমাদের নির্বাচিত কর্মকর্তারা এটির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে লড়াই করতে দ্রুত পদক্ষেপ না নেন।"