বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, নির্বাহী আদেশে সই ট্রাম্পের
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ট্রাম্প। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পরই তিনি একের পর এক নির্বাহী আদেশে সই করেন। এর মধ্যে ডব্লিউএইচও থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া-সংক্রান্ত আদেশও রয়েছে।
নির্বাহী আদেশে সই করার সময় ট্রাম্প বলেন, 'ওহহ, এটা তো বিশাল সিদ্ধান্ত!'
এর আগের মেয়াদেও ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ডব্লিউএইচও থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
করোনা মহামারি মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা নিয়ে বরাবরই ক্ষুব্ধ ছিলেন ট্রাম্প। মহামারির সময় তিনি সংস্থাটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করেন।
দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই ট্রাম্প এই নির্বাহী আদেশ কার্যকর করায় ডব্লিউএইচও থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আরও জোরালো হলো।
ওভাল অফিসে স্বাক্ষর শেষে ট্রাম্প বলেন, 'তারা (ডব্লিউএইচও) আমাদের ফেরাতে খুবই মরিয়া ছিল। দেখা যাক কী হয়!' কথাটির মধ্যে হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যতে সংস্থাটিতে ফেরার সম্ভাবনার ইঙ্গিতও দিয়ে রাখলেন তিনি।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, করোনা মহামারি ও অন্যান্য বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থতা, জরুরি সংস্কার না করা এবং ও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর রাজনৈতিক প্রভাব থেকে স্বাধীন হতে না পারার কারণেই যুক্তরাষ্ট্র ডব্লিউএইচও থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও আদেশে বলা হয়, সংস্থাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের 'অন্যায্য' পরিমাণে ভারসাম্যহীন অর্থপ্রদানও এ সিদ্ধান্তের কারণ। দেওয়া জাতিসংঘের সংস্থা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এত দিন অন্য দেশের তুলনায় সংস্থাটিকে 'অন্যায্য পরিমাণে' বেশি অর্থ দিয়েছে ওয়াশিংটন।
প্রথম মেয়াদেও ট্রাম্প ডব্লিউএইচওর বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ তুলেছিলেন। বিশেষ করে সংস্থাটির 'চীন-কেন্দ্রিক' নীতির কঠোর সমালোচনা করেছিলেন তিনি।
করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার সময় ডব্লিউএইচও যে নির্দেশিকা দিয়েছিল, সেটি চীনের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট ছিল বলে অভিযোগ তুলেছিলেন ট্রাম্প ।
বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ডব্লিউএইচওকে সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন করা রাষ্ট্র হিসেবে ফিরে আসে। ২০২৩ সালে সংস্থাটির মোট বাজেটের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ডব্লিউএইচওর বার্ষিক বাজেট প্রায় ৬.৮ বিলিয়ন ডলার।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন। তারা সতর্ক করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ডব্লিউএইচও থেকে বেরিয়ে গেলে মার্কিনীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।
অনেকে মনে করছেন, এই পদক্ষেপের ফলে ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা ও এইচআইভি-এইডসের মতো সংক্রামক রোগ মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা পিছিয়ে যেতে পারে।
বাইডেনের অধীনে করোনা মোকাবিলার সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করা ড. আশীষ ঝা এর আগে সতর্ক করে বলেছেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত কেবল সারা বিশ্বর মানুষের স্বাস্থ্যকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, বরং বৈশ্বিক নেতৃত্ব ও বৈজ্ঞানিক দক্ষতাকেও দুর্বল করবে।'
বিশ্ব জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লরেন্স গোস্টিন এই সিদ্ধান্তকে 'বিপর্যয়কর' প্রেসিডেন্সিয়াল সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছেন।