হাসতে হাসতে আদালতে প্রবেশ, বের হলেন কেঁদে
ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায়ে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে সবার ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ১২ মিনিটে এই রায় পড়ে শোনান ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ।
বিচারক রায়ের শুরুতেই নুসরাত জাহান হত্যার ঘটনায় গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করেন। আদালত বলেন, গণমাধ্যমের কারণেই এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেশবাসী জানতে পারে।
রায়ে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন আদালত। রায় পড়তে সময় লাগে ১২ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড। রায়ে ১৬ জন আসামিকেই দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
এর আগে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে আসামিদের আদালতে আনা হয়। এ সময় নুসরাতের মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ ও প্রধান অভিযুক্ত সিরাজ-উদ-দৌলাকে হাসতে হাসতে আদালতে প্রবেশ করতে দেখা যায়। ৩ মিনিটের মধ্যে আসামিদের কাঠগড়ায় তোলা হয়। রায় শোনার পর আসামিরা চিৎকার শুরু করেন। কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শামীম সাংবাদিকদের গালমন্দ করতে শুরু করেন। অন্য আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানাতে থাকেন। আসামি আবদুল কাদের সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, "কেয়ামতের দিন তোদের বিচার হবে।"
আসামিরা এ সময় বাদীপক্ষের আইনজীবীদেরও অশ্লীল ভাষায় গালি দেন। পরে পুলিশ পাহারায় আইনজীবীদের সরিয়ে নেওয়া হয়।
এদিকে নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান জানান, রায়ের পর পর আদালত চত্বরেই তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে রায়ে সন্তুষ্ট নোমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
ওদিকে, রায় ঘোষণার পর আদালত চত্বরে আসামিদের পরিবারের সদস্যদের কান্নাকাটি করতে দেখা যায়। মামলায় দ্বিতীয় অভিযুক্ত কামরুন নাহার মনিকে দেখা যায়, তার ১ মাসের শিশুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট হাফেজ আহমেদ বলেন, "এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ে খুশি।"
বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, "ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।"
অপরদিকে বিবাদীর আইনজীবী এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন নান্নু জানান, "আসামিরা ন্যায়বিচার পাননি, আমরা আপিল করব।"
৭ কার্যদিবসে আপিল করা যাবে বলে তিনি জানান।
নুসরাতের সহপাঠী নাসরিন সুলতানা ফুর্তি জানান, "খুশি হয়েছি আমার বান্ধবীর হত্যাকারীদের ফাঁসি হওয়ায়। আমিও অধ্যক্ষের রোযানলে পড়েছি। রাফিকে জানিয়েছিলাম। রাফি ছিল সাহসী। কোনো অন্যায় মেনে নিতে পারত না।"