করোনাকালে কৃষিকে সহায়তার যত উদ্যোগ
কোভিডের অভিঘাত ও বন্যা মোকাবেলায় গেল বছর কৃষিখাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যার ধারবাহিকতা চলতি বছরও থাকবে।
এসব উদ্যোগের সুফল হিসেবে কৃষকরা যেমন তার প্রয়োজনে ঋণ পাচ্ছেন, তেমনি ফসলের ভালো দাম পাওয়ায় ঋণ পরিশোধও বাড়িয়েছেন।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত 'মান্থলি রিপোর্ট অন এগ্রিকালচার এন্ড রুরাল ফাইন্যান্সিং, ডিসেম্বর ২০২০' শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গেল বছর কৃষিকে সহায়তার জন্য চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দেশ্যে শস্য ও ফসল খাত ছাড়া অন্যান্য খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ গঠন করা হয়। এই প্যাকেজ বাস্তবায়নের মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩১ মার্চ করা হয়েছে।
অন্যদিকে শস্য ও ফসলখাতকে সুবিধা দিতে গেল বছরের ১৪ এপ্রিল ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদে ঋণ সুবিধা দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ। কিন্তু কৃষকরা সুদ দিবেন ৪ শতাংশ হারে। বাকি ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে দিবে। এই স্কিমের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত।
করোনা চালকালীন গেল বছর আকস্মিক বন্যায় অনেক অঞ্চলের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের ক্ষতি মোকবেলায় গেল বছরের ২৩ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক নির্দেশনায়, কৃষকদের নতুন ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত কৃষি ঋণ আদায় স্থগিত ও ডাউন পেমেন্ট শর্ত শিথিল করতে বলেছিল।
একই মাসের শেষে এসে পার্বত্য তিন জেলার কৃষক, বর্গাচাষী ও জুমচাষিদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলা এবং ডাল ও মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদেন ৪ শতাংশ সুদে ঋণ সুবিধা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে কৃষিখাতের অবদান কমে গেলেও খাদ্য নিরাপত্তা ও শ্রমিকদের অংশগ্রহণ বিবেচনায় এই খাতকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
সেখানে বলা হয়, টেকসই অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কৃষিক্ষেত্র ও বেসরকারী সকল কার্যক্রমের ক্রেডিট প্রবাহকে ত্বরান্বিত করার জন্য ধারাবাহিকভাবে নীতিমালা সরবরাহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বলা হয়, আরও বেশি ক্রেডিট চ্যানেলের মাধ্যমে উত্পাদনশীলতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ফসল অ-ফসল উভয় ক্ষেত্রেই সর্বাধিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উত্সাহিত করতে হবে যা এই খাতের টেকসই বৃদ্ধি বাড়ানোর জন্যও প্রয়োজনীয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের জন্য প্রায় ৯ শতাংশ বাড়িয়ে কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬,২৯২ কোটি টাকা।
অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৪৬ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যার পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি।
জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে কৃষকরা ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ পরিশোধ করেছেন, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২২.৫৩ শতাংশ বেশি।