সেশনজট নিয়ন্ত্রণে অনলাইনে পরীক্ষা নিতে চায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সেশনজট নিরসনে এবার আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে গত বছরের চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করতে চায়।
এ উদ্দেশ্যে পরীক্ষা গ্রহণের তারিখ ও প্রক্রিয়া নির্ধারণের জন্য দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে আগামী ৪ মে এক বৈঠকে বসবেন।
কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলার লক্ষ্যে সরকারের নির্দেশে গত বছরের মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, মহামারীর মধ্যেও তারা অনলাইনে ক্লাস নিয়েছেন কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় কোন পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় নি।
"আগামী সপ্তাহে আমরা পরীক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। সত্যি কথা বলতে, আমরা আর অপেক্ষা করতে চাই না। আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন সুন্দরভাবে সম্পন্ন হোক', যোগ করেন তিনি।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মোঃ আলমগীর টিবিএসকে বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যবৃন্দের সাথে বৈঠকের পর কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিমেস্টার ফাইনাল বা সমাপনী পরীক্ষা সংক্রান্ত গাইডলাইন চূড়ান্ত করবে।
তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গত বছরের এপ্রিল থেকেই অনলাইনে ক্লাস এবং পরীক্ষা গ্রহণ করে আসছে। বিপরীতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মহামারির পাঁচ মাস পর গত বছরের জুলাই থেকে অনলাইনে ক্লাস নেয়া শুরু করে।
মনোবিজ্ঞানী এবং শিক্ষাবিদদের মতে, মহামারির ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবন সম্পন্ন এবং চাকুরীর অনিশ্চয়তায় হতাশ ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে।
সেশনজটের সমাধানে ক্রাশ প্রোগ্রাম
সেশনজট কমাতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্রাশ প্রোগ্রাম গ্রহণের পরিকল্পনা করছে। যেমন- সিমেস্টারের সময় কমিয়ে নিয়ে আসা এবং স্বল্প সময়ের ভেতর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা।
দেশের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সিমেস্টারের সময়সীমা দুই মাস কমিয়ে আনবে, পরীক্ষা গ্রহণ এবং ফল প্রকাশের সময়ও হ্রাস পাবে। ফলে ছাত্রছাত্রীরা নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরেই তাদের লেখাপড়া শেষ করতে পারবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল টিবিএসকে বলেন, 'মহামারিজনিত কারণে শিক্ষার্থীরা এক বছরেরও বেশি সময় হারিয়েছে। তারা ক্লাস শেষ করেছে তবে পরীক্ষায় বসার সুযোগ পায়নি'।
'আমরা আসন্ন সিমেস্টারটি ছয় মাসের পরিবর্তে চার মাসে শেষ করব। শিক্ষকদেরকেও এ জাতীয় ক্রাশ প্রোগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছি'।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী কল্যাণ অধিদপ্তরের (ডিএসডব্লিউ) পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান টিবিএসকে জানান, বুয়েট অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবহারিক পরীক্ষা গ্রহণেরও পরিকল্পনা করছে।
তিনি বলেন, 'আমাদের শিক্ষকরা এমন ভিডিও তৈরি করছেন যা শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাসে অংশ নিতে সহায়তা করবে। শিক্ষার্থীরা কোনও বিষয় বুঝতে না পারলে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার সুযোগ পাবে। ক্লাস শেষ করার পরে আমরা অনলাইনেই ব্যবহারিক পরীক্ষা নেব'।
'তবে কিছু বিষয়ের ব্যবহারিক অনলাইনে নেয়া একেবারেই অসম্ভব। সেক্ষেত্রে আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরে এলে ব্যবহারিক ক্লাসগুলো নেয়ার ব্যবস্থা করব'।
প্রকৃত চিত্র হলো, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ইন্টারনেটের ব্যয়বহুল ডেটা প্যাকেজ, স্মার্টফোন এবং ল্যাপটপসহ ডিজিটাল ডিভাইসের অভাব এবং ইন্টারনেট সংযোগের সীমাবদ্ধতার কারণে অনলাইন ক্লাসে অংশ নেয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই অনলাইন ক্লাসের পরিস্থিতি অত্যন্ত অসন্তোষজনক। শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষকদের মতে, অনলাইন মাধ্যমে ক্লাস গ্রহণের ফলে শিক্ষার্থীরা একপ্রকার ডিজিটাল বিভাজনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই কোনো সেশনজট
করোনা মহামারিতে গত বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস গ্রহণ শুরু করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে গত বছরের মে-তে ইউজিসি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি প্রদান করে। ফলস্বরূপ, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কোনও সেশনজটের মুখে পড়তে হয়নি।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন যে, বৈশ্বিক এ মহামারি বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রভাবিত করেছে কিন্তু এর ফলে তার শিক্ষার্থীরা কোনরূপ সেশনজটের সম্মুখীন হয়নি।
তিনি বলেন, 'এখন ইউজিসির নির্দেশে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ রয়েছে। ঈদের পর এ বিষয়ে একটি পরিপূর্ণ গাইডলাইন পাবো বলে আমরা আশা করছি'।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পরিচালক (স্টুডেন্টস এফেয়ার) সৈয়দ মিজানুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'সেশনজট নিয়ন্ত্রণে আমরা অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি'।
'আমরা সময় মতো শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণ করেছি। মহামারীকালীন সময়েও আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করতে পেরেছে'।