ফাইজারের টিকাগ্রহীতাদের দেহে সিনোভ্যাকের চেয়ে অ্যান্টিবডির মাত্রা বেশি: গবেষণা
কোভিড-১৯ এর ফাইজার-বায়োএনটেক ও সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের মধ্যে ফাইজারের ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাদের দেহে উল্লেখযোগ্যহারে অধিক মাত্রায় অ্যান্টিবডি থাকার প্রমাণ মিলেছে। হংকং এর সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফলাফলে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণাটির ফলাফলে একটি ভ্যাকসিনের ওপর আরেকটিকে প্রাধান্য দেওয়া না হলেও, হংকং সরকারের অ্যান্টিবডি টেস্টের ওপর ভিত্তি করে ভ্রমণকারীদের কোয়ারেন্টিনের সময় কমিয়ে আনার ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
গবেষণাটির প্রধান গবেষক ইউনিভার্সিটি অব হংকং-এর মহামারিবিদ অধ্যাপক বেনজামিন কাওলিং সংবাদমাধ্যমকে জানান, গবেষণাটির ফলাফল অনুযায়ী, যারা সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদের কারো হয়তো ভবিষ্যতে বুস্টার শটের প্রয়োজন পড়তে পারে।
সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়টির স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষণাটিতে দুটি ভ্যাকসিন গ্রহণ করা এক হাজার মানুষের অ্যান্টিবডি পরিমাপ করা হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা এবং আক্রান্ত ও টিকা নেওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টির মাত্রা পরিমাপ করাই গবেষণাটির উদ্দেশ্য ছিল।
বিস্তারিত গবেষণাটি প্রথমে অ্যাকাডেমিক জার্নালে প্রকাশিত হবে বলে জানান ড. বেনজামিন।
"যারা ফাইজারের ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদের দেশে উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চ মাত্রা অ্যান্টিবডির উপস্থিতি দেখেছি আমরা। ভ্যাকসিনটির তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের ফলাফলের সঙ্গে সামঞ্জস্য পাওয়া গেছে।
ফাইজারের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার হার ৯৫ শতাংশ, অন্যদিকে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এ হার ৫০.৭ শতাংশ।
দুটি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার হারের সঙ্গেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফলের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে হংকং এ ৩০ লাখের বেশি ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ১৭ লাখ ফাইজারের ও ১৩ লাখ সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।
দেহে অ্যান্টিবডির পরিমাণ থেকে কোনো ব্যক্তি কী পরিমাণ সুরক্ষা পাবেন তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়না। তবে ডা. বেনজামিন জানিয়েছেন, অ্যান্টিবডির পরিমাণ বেশি থাকলে সংক্রমণের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও ভালোভাবে কাজ করে- প্রতিনিয়তই এর প্রমাণ মিলছে।
বেশি পরিমাণে অ্যান্টিবডি থাকলে দেহে তার স্থায়িত্বও বেশি হয়, অর্থাৎ আরও বেশি সময় ধরে রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
তবে এমনকি কোনও ব্যক্তির দেহে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি না থাকলেও তাদের দেহে কোনো ভাইরাসের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠতে দেখা গেছে।
ড. বেনজামিন এব্যাপারে বলেন, ২০০৯ সালের এইচ১এন১ সোয়াইন ফ্লু মহামারির সময় অনেক বয়স্ক ব্যক্তির দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠতে দেখা যায়। তারা ইতোপূর্বে শিশু বা তরুণ বয়সে একই ধরনের অন্য ভাইরাসের সংস্পর্শে আসায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজ করেছে বলে জানান তিনি।
হংকং যখন ভাইরাস থেকে আরও সুরক্ষার জন্য বুস্টার শট দিতে অতিরিক্ত ডোজ ভ্যাকসিন সংগ্রহের চেষ্টা করছে, এমন সময়েই গবেষণাটির ফলাফল প্রকাশিত হয়। হংকং-এ ফাইজার ও সিনোভ্যাক দুটি ভ্যাকসিনেরই দুই ডোজ দিয়ে টিকাদান কর্মসূচি চালানো হয়েছে।
সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের মধ্যে অ্যান্টিবডির মাত্রা কম থাকায়, কিছু ব্যক্তির জন্য তৃতীয় ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে বলে জানান ড. বেনজামিন।
তবে ঠিক কতো সময় পর পরবর্তী ডোজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে আর বুস্টার শটের কার্যকারিতাই বা কেমন হবে- এব্যাপারে নিশ্চিত হতে আরও গবেষণার প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
- সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট