বেলুন, চকলেট দিয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ করা হয়েছে; স্কুল সেজেছে নতুন সাজে
দীর্ঘ ৫৪২ দিন আজ থেকে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সশরীরে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাঙ্গন শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মুখর।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হওয়া নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে দেখা গেছে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা। প্রায় দেড় বছর পর চিরচেনা ইউনিফর্ম, ব্যাগ কাঁধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসেছেন শিক্ষার্থীরা। এ যেন দীর্ঘ বন্দিজীবন থেকে মুক্তির আনন্দ! দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পদচারণা এমনটিই জানান দিচ্ছে।
প্রায় দেড় বছর পর স্কুল কলেজের আঙিনায় পা রেখে শিক্ষার্থীদের যেন বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস। ছিলো স্বাস্থ্য বিধির সকল নিয়মকানুন; এরপরেও নানা আনুষ্ঠানিকতায় উৎসবের আমেজে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
দেখে নেওয়া যাক দেশের বিভিন্ন প্রান্তের স্কুল কলেজের আজকের দিনের নানা চিত্র।
সকাল সাড়ে ৯টা। ঢং ঢং করে বেজে উঠলো রূপসা উপজেলার বাগমারা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাক্সিক্ষত ঘণ্টা। আর এর মধ্যদিয়েই দীর্ঘ দেড় বছর পর শুরু রবিবার শুরু হলো প্রথম দিনের ক্লাস। স্কুলে প্রবেশ করেই আনন্দ-উচ্ছ্বাসে আত্মহারা হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা।
হাওরদ্বীপ খালিয়াজুরীর বল্লভপুর সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহরলাল দেব রায় জানান, তার বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির ২৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৮ জন এবং পঞ্চম শ্রেণির ৩০ জনের মধ্যে ২০ জন উপস্থিত হয়ছে। র্দীঘদিন পর খোলার কারণে বেলুনসহ নানা উপকরণ দিয়ে সাজানো হয়ছেে বিদ্যালয় প্রাঙ্গন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়ছেে চকোলেট। করা হয়ছেে কুশল বিনিময়সহ আনন্দানুষ্ঠান।
খোলার প্রথম দিনে নেত্রকোনার বিভিন্ন উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা গেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় ও পঞ্চম এবং উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম, নতুন দশম এবং পুরাতন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন পর খোলার আনন্দে প্রায় সব ক্লাসের শিক্ষার্থীরাই কম-বেশি উপস্থিত হয়েছে।
তবে কিছু কিছু বিদ্যালয়ে প্রথম দিন কোন একাডেমিক পাঠদান করা হয়নি। শিক্ষকরা তাদের নিয়ে কুশল বিনিময়, করোনার স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে আলোচনা এবং মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ করেছেন। আবার কিছু কিছু বিদ্যালয়ে পাঠদানও করা হয়েছে। এদিকে উপজেলা প্রশাসন ও শিক্ষা বিভাগের মাঠ কর্মকর্তারা বিভিন্ন বিদ্যলয় পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
সিলেটের ১০৪৯ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য বিধি কড়াকড়িভাবে মানতে নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন। ফলে সকল শিক্ষার্থীদের মুখেই ছিলো মাস্ক। আর তাদের চোখে ছিলো আনন্দের ঝিলিক।
রোববার সকালে সিলেটের আখালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ, ব্লু-বার্ড স্কুল এন্ড কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসে ফিরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীদের। আনন্দিত শিক্ষকরাও।
মুখে মাস্ক পরে সকালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকারা হাতে ফুল নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন শিক্ষার্থীদের। তারা আসার পর ফুল দিয়ে বরণ করা হয় তাদেরকে। একইসাথে মাপা হয় তাদের শরীরের তাপমাত্রা। ব্যবস্থা ছিল হাত ধোয়ারও।
লাইন ধরে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। শ্রেণিকক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদেরকে নতুন ড্রেস পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে দেখা গেছে। এমনকি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একই রঙের নতুন কাপড় পরিধান করতে দেখা গেছে।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ কমায় সরকার দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। তবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হওয়ায় পুনরায় সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কাও করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসএসসি, এইচএসসি ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ছয়দিন ক্লাস করবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সময়কাল হবে চার ঘণ্টা। ফলে, দেশের প্রায় ৯০ হাজার শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে নিয়মিত ক্লাসে অংশ নিতে হবে।
এর বাইরে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের অন্যান্য শ্রেণির প্রায় তিন কোটি এক লাখ শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন ক্লাস করবেন।
আজ সকাল ১০টায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি রাজধানীর আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শন করবেন।