৬১৮ দিন পর প্রাণ পেল মিরপুরের গ্যালারি
এক বছর আট মাস আট দিন। মাসের হিসাবে সেটা ২০ মাস আট দিন। ৮৮ সপ্তাহ কিংবা ৬১৮ দিন; এমন সব হিসাব গোলমেলে মনে হতে পারে। কীসের হিসাব সেটাও হতে পারে প্রশ্ন। কিন্তু যারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্ত, মাঠে গিয়ে খেলা দেখেন যারা; তাদের কাছে এই হিসাবটি একেবারে সোজা। সংখ্যা দেখেই তারা বলে দেবেন, 'মিরপুর স্টেডিয়ামের গ্যালারি ফাঁকা পড়ে থাকার হিসাব এটা।'
হ্যাঁ, দীর্ঘ ৬১৮ দিন পর মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে প্রাণ ফিরেছে। গত বছরের ১১ মার্চে শুরু হওয়া বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টেস্টের পর এই প্রথম দর্শকদের পা পড়ল হোম অব ক্রিকেটের গ্যালারিতে। যদিও ৫০ শতাংশ গ্যালারি খোলা হয়েছে, তাতেই মিরপুর স্টেডিয়ামে ফিরে এসেছে চিরচেনা উৎসবমুখর দৃশ্য।
করোনাভাইরাসের প্রকোপে থমকে গিয়েছিল ক্রিকেটাঙ্গন। দীর্ঘ বিরতির পর ঘরোয়া ক্রিকেট দিয়ে মাঠে ফেরেন ক্রিকেটাররা। এরপর আয়োজিত হয় আন্তর্জাতিক সিরিজ, কয়েকটি সিরিজ অনুষ্ঠিত হয় মিরপুর স্টেডিয়ামে। কিন্তু সব খেলাই হয় দর্শকশূন্য মাঠে। অবশেষে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজে দর্শক ফেরালো বিসিবি। ৫০ শতাংশ গ্যালারি উন্মুক্ত কনরা হয়েছে, কেবল দুই ডোজ করোনার টিকা নেওয়া থাকলেই মাঠে প্রবেশ করা যাচ্ছে।
টিকেট সংখ্যা ৫০ শতাংশ হওয়ায় আক্ষেপেরও শেষ নেই। টিকেট পাননি এমন অনেক দর্শক হাজির হন মিরপুর স্টেডিয়ামের বাইরে। একটি টিকেটের আশায় হন্যে হয়ে ফিরেছেন অনেকেই। কেউ কেউ টিকেটও পেয়েছেন। এর জন্য কয়েকগুণ মূল্য দিতে হয়েছে তাদের। কালাবাজারিদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা মূল্যের টিকেট ১২০০ টাকাতেও কিনেছেন কেউ কেউ।
আগেরদিন টিকেট পাওয়া ক্রিকেটমোদীরা ম্যাচের দিন বেলা ১১টার মধ্যেই স্টেডিয়ামে হাজির হন। তাদের অপেক্ষা শেষ শেষ হয় বেলা সাড়ে ১২টায়। স্টেডিয়ামের গেটগুলো খুলতেই উল্লাসে ফেটে পড়েন তারা। এক নম্বর গেট দিয়ে সবার আগে মাঠে ঢোকেন জুনায়েদ নামের এক দর্শক।
বাংলাদেশের জার্সি পরা জুনায়েদ মাথায় বেঁধেছেন বাংলাদেশের পতাকা। গায়েও জড়ানো বাংলাদেশের পতাকা। গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী বলেন, 'আমি ১১টার কিছুক্ষণ আগে মাঠে আসি। আমার লক্ষ্য ছিল সবার আগে মাঠে ঢোকা। অনেকদিন পর বাংলাদেশের জন্য গলা ফাটাতে পারব, ভাবতেই খুব ভালো লাগছে।'
জুনায়েদের উচ্ছ্বাস দেখে যেন রাকিবের আফসোস আরও বাড়ছিল। ছুটির দিনে আশা নিয়ে মাঠে এসেও টিকেটের ব্যবস্থা করতে পারেননি প্রাইভেট একটি কোম্পানিতে চাকরি করা রাকিব। তার ভাষায়, 'অনেক চেষ্টা করেও একটা টিকেটের ব্যবস্থা করতে পারিনি। যেকোনো টিকেট ২ হাজার মূল্যেও কিনতে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু টিকেটই পেলাম না।'
পাকিস্তানি কিছু দর্শকও মাঠে হাজির হন খেলা দেখতে। নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টেসে কাজ করা ইকবাল নামের এক পাকিস্তানি সমর্থক বলেন, 'আমরা নারায়ণগঞ্জে কাজ করি। ওখানেই আমরা থাকি। পাকিস্তান খেলতে এসেছে, তাই খেলা দেখতে এসেছি। আমরা চাই দারুণ এক ম্যাচ উপভোগ করতে। পাকিস্তান জিতলে খুশি হব। তবে বাংলাদেশ জিতলেও খারাপ লাগবে না। আমাদের চাওয়া কেবল ভালো ক্রিকেট ম্যাচ দেখা।'