স্লিপওয়াকের মাঝে কাউকে জাগানো কি বিপজ্জনক?
থ্রিলার কিংবা হরর গল্প-সিনেমার স্ক্রিপ্ট রাইটারদের কাছে স্লিপওয়াকিং বিষয়টি বেশ প্রিয়। ঘুমের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে পর্দা কিংবা বইয়ের পাতায় মানুষ কত অঘটনই না ঘটায়। কখনো তো খুনোখুনি পর্যন্ত হয়ে যায়। কিন্তু ঘুম থেকে জেগে উঠলে খুনির মাথায় আর কিছুই থাকে না। পর্দা পর্যন্ত তবু ঠিক আছে, কিন্তু সামনাসামনি এমন কারও সঙ্গে হুট করে সাক্ষাৎ হয়ে গেলে? তখন তো খুন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন নেই, পিলে চমকেই ছোটখাটো হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে।
কিন্তু ঘুমন্ত ব্যক্তিকে যদি হঠাৎ চলাফেরা করতে দেখেন, তখন কী করবেন? প্রচলিত আছে, স্লিপওয়াকিংয়ের সময় কাউকে জাগাতে নেই। হুট করে কাউকে জাগানো হলে বড় ধরনের মানসিক ধাক্কা বা ট্রমার সৃষ্টির হতে পারে। কিন্তু নিদ্রা বিষয়ক চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে বিষয়টি নাকি স্রেফ মিথ।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আরকানসাস ফর মেডিকেল সায়েন্সেসের পালমোনোলজিস্ট এবং স্লিপ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ড. রাঘু রেড্ডির মতে, "স্লিপ ওয়াকিংয়ের সরাসরি কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। তবে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকায় পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঘুমের ভেতর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে, জানালা দিয়ে লাফ দিলে, লাইটার জ্বালালে, রান্নাঘরে গিয়ে চাকু হাতে নিলে কিংবা ধারালো কোনো কিছুর সঙ্গে ধাক্কা খেলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে।"
তাহলে একজন স্লিপওয়াকারকে সাহায্য করার উপায় কী? ড. রেড্ডির মতে, তাদের পুনরায় বিছানায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া।
"ঘুমের ভেতর কাউকে হাঁটতে দেখলে তাৎক্ষণিকভাবে কী ব্যবস্থা নিতে হবে এ বিষয়ে কোনো স্বীকৃত তথ্য নেই। ঘুমন্ত অবস্থায় চলাফেরা করা ব্যক্তিকে ডেকে তোলা বিপজ্জনক না হলেও বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বিষয়টি অনুৎসাহিত করেন। তাদের মতে এর ফলে কোনো লাভ হয় না, বরং সেই ব্যক্তি হঠাৎ জেগে হতভম্ব হয়ে পড়তে পারেন। আর তাই তাদের কোনো জোর না করেই সহজভাবে বিছানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। সেটা সম্ভব না হলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কড়া নজর রাখতে হবে," বলেন তিনি।
ড. রেড্ডি আরও বলেন, 'প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে স্লিপওয়াকিং সচরাচর দেখা যায় না। এছাড়া বিষয়টি বংশগত বলেও ধারণা করা হয়। সাধারণত ৪ বছর বয়স থেকে শুরু করে ৮ বছর বয়সীদের মধ্যে স্লিপওয়াকিং সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এরপর বয়সের সঙ্গে তা কমতে শুরু করে। যেসব শিশুদের বাবা অথবা মা অথবা উভয়ের স্লিপওয়াকের অভ্যাস ছিল তাদের ঘুমের মধ্যে হাঁটার সম্ভাবনাও বেশি। এমনকি ঘুমের মধ্যে হাঁটে এমন ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ শিশুর বাবা-মার অন্তত একজনের স্লিপওয়াকের বংশগত ইতিহাস রয়েছে।'
স্লিপওয়াকের সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু জিন সম্পর্কিত বলে জানা গেছে। কিন্তু এই রোগ কি সম্পূর্ণ সেরে ওঠে? না, এর কোনো চিকিৎসা নেই। তবে চিন্তারও কারণ নেই। বেশিরভাগ মানুষই প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় যাওয়ার আগেই এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠে।
তবে যাদের সমস্যা খুব বেশি গুরুতর তাদের বেনজোডায়াজিপিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়।
- সূত্র: ইউএএমএস হেলথ