মহামারিকালেও দেশে কোটিপতি বেড়েছে
কোভিডকালে ব্যাংকিং খাতে কোটি টাকার বেশি আমানতকারী হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৩৯টি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুয়ায়ী এমনটি জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায়, চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে কোটিপতির হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৩৯টি। যেখানে গত জুন শেষে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৯৯ হাজার ৯১৮ জন।
অর্থাৎ গত তিন মাসে ব্যাংক ব্যবস্থায় নতুন কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ৩২১ জন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গেল বছরের মার্চে যখন দেশে কোভিডের প্রভাব শুরু হয়, তখন ব্যাংকে কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫টি। এই বছরের সেপ্টেম্বরে এটি বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ২৩৯টি। অর্থাৎ এই পরিমাণ অ্যাকাউন্টে কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নিয়মিত কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে এটা কোভিডকালীন সময়ের জন্য আশ্চর্যের বিষয় তার মানে দেশে বৈষম্য বেড়েছে। তবে এখন কোভিড পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক। অনেকে ব্যবসা বাণিজ্য করছে এর ফলে নতুন করে কিছু লোক কোটিপতি হচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, "কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিত হচ্ছে, নতুন করে অর্থণীতি বৃদ্ধি পেয়েছে তাই কোটিপতি বাড়বে এটা স্বাভাবিক। এছাড়া এখন অনেক রপ্তানি হচ্ছে এর ফলে অনেকে প্রফিট করছে।"
যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা দেখালেও প্রকৃত কোটিপতির সংখ্যা এটা নয়। কারণ, ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়াও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নামেও হিসাব রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি প্রাতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্টের পেছনে এক বা একাধিক ব্যক্তি রয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ১২ কোটি ৩৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩৪৬টি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা আছে ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৮৮৮ কোটি। এরমধ্যে কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা এক লাখ ২৩৯টি।
যদিও গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৮৭ হাজার ৪৯০ জন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোটিপতি গ্রাহক বেড়েছে ১২ হাজার ৭৪৯ জন।
এছাড়া চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ব্যাংক খাতে পাঁচ হাজার ৬৪৬টি কোটিপতি ব্যাংক হিসাব যোগ হয়েছে, যেখানে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোটিপতি হিসাবধারী বেড়েছিল ৩৮২ জন।
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গেল বছরে কোভিডকালীন আয়, ব্যয় ও বেকারত্বের প্রভাব তুলে ধরে একটি পরিসংখ্যান দিয়েছিল, যেখানে বলা ছিল করোনায় মানুষের আয় কমেছে ২০ শতাংশ। করোনার আগে গত মার্চ মাসে প্রতি পরিবারের মাসিক গড় আয় ছিল ১৯ হাজার ৪২৫ টাকা। ২০২০ সালের আগস্টে তা কমে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৪৯২ টাকায়।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি ছিলেন মাত্র পাঁচ জন। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে এই সংখ্যা বেড়ে ৪৭ জনে দাঁড়ায়। ১৯৮০ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৮ জনে। এরশাদ সরকারের পতনের সময় ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৯৪৩ জন।
১৯৯৬ সালের জুনে দেশে কোটিপতি ছিলেন ২ হাজার ৫৯৪ জন। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার ১৬২ জনে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৮৮৭ জনে। ২০০৮ সালে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারী গ্রাহক ছিলেন ১৯ হাজার ১৬৩ জন।