যে কৌশলে সফল জয়
পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট অভিষেক। দুই ইনিংসের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে ভয় পাচ্ছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্যই হয়তো প্রস্তুত নন তিনি। সেই মাহমুদুল হাসান জয়ই নিউজিল্যান্ডে গিয়ে দেখা দিলেন পুরোপুরি ভিন্ন রূপে। যেখানে কিউইদের বিশ্বসেরা পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে সবাই নাকানি চোবানি খায়, সেখানেই জয় হয়ে উঠলেন ধৈর্যের প্রতিমূর্তি।
মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের প্রথম ইনিংসে দলের বড় সংগ্রহের ভিত গড়তে জয় ছিলেন কাণ্ডারির ভূমিকায়। তরুণ ডানহাতি এই ওপেনার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা উইকেটে সময় কাটিয়েছেন। ২২৮ বলে খেলেছেন ৭৮ রানের মহা কার্যকর এক ইনিংস। বিরুদ্ধ কন্ডিশনে জয়ের এই ব্যাটিং অনেকের কাছেই বিস্ময়ের। কোন কৌশলে এমন ইনিংস খেলা সম্ভব হয়েছে, তৃতীয় দিনের খেলা শেষে তা জানালেন বাংলাদেশ ওপেনার।
বাংলাদেশের প্রথম ওপেনার হিসেবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ১৪৪ বলের বেশি খেলা জয় বলেন, 'নিউজিল্যান্ড দলের পেস বোলিং আক্রমণ বিশ্বসেরা। ওরা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী দল। আমি এ ক্ষেত্রে আমার স্বাভাবিক খেলাটাই খেলার চেষ্টা করেছি। ওদের বোলারদের নাম না দেখে বল দেখে খেলার চেষ্টা করেছি।'
'আমার পরিকল্পনা ছিল রানের দিকে না গিয়ে বেশি বেশি বল খেলার। আমি বেশি বল খেলতে পারলে রান এমনিতেই আসবে। আমার সঙ্গী যারা ছিলেন, সাদমান ভাই, শান্ত ভাই, মুমিনুল ভাই; সবাই একই কথা বলেছেন। এটাই ছিল উইকেটে শান্ত থাকার কারণ।' যোগ করেন জয়।
পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে ২১ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান বলেন, 'পরিকল্পনা তেমন কিছু ছিল না। মূল ম্যাচের আগে যে প্রস্তুতি ম্যাচটা খেলেছি, সেটা অনেক কাজে দিয়েছে। সেখানে আমি খেলার সুযোগ পাই এবং মোটামুটি ভালোই করি। সেখান থেকেই আমি আত্মবিশ্বাস পাই যেটা মূল ম্যাচে মোটামুটি পারফর্ম করতে সাহায্য করেছে।'
এ পথে দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সমর্থনও সাহস যুগিয়েছে বলে জানান জয়। তার ভাষায়, 'দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের কাছ থেকে দারুণ সমর্থন পেয়েছি। আমি যে নতুন দলে এসেছি, সেই চাপটা আমি অনুভব করিনি। টিম ম্যানেজমেন্টের সবাই আমাকে সাহায্য করেছে।'
লম্বা ইনিংস খেলার পথে বল পুরনো হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছেন জয়। এই পরিকল্পনায় ভালোভাবেই উতড়ে গেছেন তিনি। জয় বলেন, ' ব্যাটিংয়ের শুরুর দিকে আমার আর সাদমান ভাইয়ের পরিকল্পনা ছিল যে নতুন বলটা কীভাবে পুরনো করা যায়, আর বল বাই বল খেলব। ভেবেছি আমরা যদি বেশি লম্বা চিন্তা করি তাহলে হয়তো সফল নাও হতে পারি, কিন্তু বল বাই বল খেললে ওটাতে সফল হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি থাকে।
'আমাদের জুটিটা ভালোই হয়, যখন শান্ত ভাই আসেন। তার সঙ্গেও আমার জুটিটা অনেক ভালো হয়। কিছু কিছু সময় আমি শটস খেলার জন্য বেশি আক্রমণাত্মক হই, তখন শান্ত ভাই আমাকে নিয়ন্ত্রণে থাকার জন্য বলেন। তারপর মুমিনুল ভাইয়ের সঙ্গেও আমার জুটি হয়, মুমিনুল ভাইও আমাকে একই কথা বলেন।' যোগ করেন জয়।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস ৩২৮ রানে গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ উইকেটে ৪০১ রান তুলেছে মুমিনুল হকের দল, লিড দাঁড়িয়েছে ৭৩ রানের। মুমিনুল ৮৮, লিটন ৮৬, জয় ৭৮, শান্ত ৬৪ ও সাদমান ২২ রান করেন। ৩টি করে উইকেট নেন নেইল ওয়াগনার ও ট্রেন্ট বোল্ট।