মিয়ানমারের শীর্ষ কর্মকর্তারা পাকিস্তানের থান্ডার ফাইটার জেটসহ অস্ত্রশস্ত্র কেনার পথে!
নিষেধাজ্ঞায় বিধ্বস্ত মিয়ানমার অস্ত্র কিনতে খুঁজছে নতুন উপায়। আর তাই সম্ভাব্য একটি অস্ত্র চুক্তিকে সামনে রেখে দেশটির জান্তা সরকার শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল পাকিস্তানে পাঠাচ্ছে। দ্য ইউরেশিয়ান টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এ তথ্য।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে মিয়ানমারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তা ও তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পশ্চিমা দেশগুলো। মিয়ানমারে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক শাসন কায়েম করেছে বর্তমান জান্তা সরকার।
দ্য ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি পাকিস্তানের কাছ থেকে ৬০ এমএম ও ৮১ এমএম মর্টারের পাশাপাশি এম-৭৯ গ্রেনেড লঞ্চার এবং ভারী মেশিনগান কিনতে চায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানের জন্য পাকিস্তানের কাছ থেকে এয়ার-টু-সারফেস মিসাইল কিনতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে মিয়ানমার। নিষেধাজ্ঞার কারণে চীনের কাছ থেকে সরাসরি এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কিনতে পারছে না নেপিদো, তাই অস্ত্র আসবে পাকিস্তানের মাধ্যমে।
উল্লেখ্য, পাকিস্তান অ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স এবং চীনের চেংডু এয়ারক্রাফ্ট ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে তৈরি যুদ্ধবিমান 'জেএফ-১৭ থান্ডার' ২০১৫ সালে কিনে নেয় মিয়ানমার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গেল বছর সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চপর্যায়ের দল মিয়ানমারে গোপন সফর সেরেছে। সফরকালে দুই দেশের মধ্যে উন্নত অস্ত্র প্রযুক্তি, বিমান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণসহ নৌ অস্ত্র নিয়ে আলোচনা হয়।
১০ সদস্যের পাকিস্তানি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এবং মৌখিতভাবে আপগ্রেডেড জেএফ-১৭ (ব্লক-৩) বিমান এবং এয়ার-টু-সারফেস মিসাইল বিক্রির বিষয়ে আলোচনা করেন।
রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার ও পাকিস্তানের সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মৌলবাদী রোহিঙ্গা সংগঠনগুলোকে সহায়তা ও মদদ দেওয়ার অভিযোগ এনেছিল মিয়ানমার।
তবে, গতবছর জান্তা সরকারের সেনা অভ্যুত্থানের পরে পশ্চিমাবিশ্ব মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে প্রয়োজনের স্বার্থে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হতে থাকে দেশটির। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ যখন মিয়ানমারে সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়, তখন চীন সমর্থিত পাকিস্তান দেশটির সঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার সুযোগ গ্রহণ করে।
চীনের মতো পাকিস্তানও মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান-পরবর্তী উন্নয়নকে স্বীকৃত দেয় এবং বিশ্বাস করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় থাকবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মিয়ানমার ও পাকিস্তান ভবিষ্যতে তাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও বাড়াবে।
- সূত্র: দ্য ইউরেশিয়ান টাইমস