আড়াই বছর পর কারামুক্ত যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সম্রাট
চার মামলার সবকটিতে জামিন পাওয়ায় অবশেষে ৩২ মাস পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। বুধবার (১১ মে) বিকেলে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএসএমইউ) করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) কারাগার থেকে মুক্তি পান। এদিন ওই ওয়ার্ডের সামনে প্রহরায় থাকা কারারক্ষী সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় এখনই কারা হাসপাতাল ছাড়ছেন না সম্রাট, আরো কিছুদিন চিকিৎসা নিবেন সেখানেই।
জামিনে মুক্ত হবার খবর জানাজানির পর তাকে দেখতে অনেকে হাসপাতালে যান, ফুলেল শুভেচ্ছা জানান সরকারদলীয় অনেক নেতাকর্মী।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ জানান, সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সম্রাটকে কারামুক্ত করা হয়। এর পরই হাসপাতালের সিসিইউ ওয়ার্ড থেকে কারারক্ষী সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে চিকিৎসা অব্যাহত থাকায় এখনই বাসায় ফিরছেন না তিনি।
বিএসএমএমইউ'র পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম খান বলেন, সম্রাট এখনো হাসপাতালের সিসিইউতে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে চিকিৎসক পরামর্শ দেবেন আর কতদিন তাকে হাসপাতালে থাকতে হবে।
এর আগে সকালে দুদকের দায়ের করা অবৈধ সম্পদের মামলায় তিন শর্তে জামিন পান সম্রাট। ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ আদালতের বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান বুধবার সম্রাটের উপস্থিতিতে জামিনের আদেশ দেন। এর আগে দুই দফায় তার জামিন নাকচ করেছিলেন আদালত।
এর আগে গত ১০ এপ্রিল সম্রাটের বিরুদ্ধে অর্থপাচার মামলায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন এবং অস্ত্র মামলায় দ্বিতীয় অতিরিক্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক ফয়সল আতিক বিন কাদেরের আদালত থেকে জামিন পান। পরদিন মাদক মামলায় ঢাকার ৭ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তেহসিন ইফতেখারের আদালত থেকে জামিন পান তিনি।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।
২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর মামলাটি তদন্ত করে সম্রাটের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের উপ পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় আদালত তাকে তিন শর্তে জামিন দিয়েছেন। তা হলো- অসুস্থতা বিবেচনা, আদালতের অনুমতি ছাড়া বিদেশে না যাওয়া এবং প্রতিটি ধার্য তারিখে আদালতে হাজিরা দিতে হবে।
সম্রাটের পক্ষে জামিন শুনানি করেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী ও মাহবুবুল আলম দুলাল প্রমুখ। দুদকের পক্ষে বিশেষ পিপি মোশাররফ হোসেন কাজল জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় আগামী ৯ জুন পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
বহুল আলোচিত ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর সম্রাটকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
১৯৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে একটি মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের উপপরিদর্শক রাশেদুর রহমান বাদী হয়ে রাজধানীর রমনা থানায় এই মামলা (মামলা নম্বর ১৪) করেন। সম্রাট তার সহযোগী এনামুল হক আরমানের মাধ্যমে ১৯৫ কোটি টাকা সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পাচার করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে ওই মামলায় এখনো চার্জশিট দিতে পারেনি সিআইডি।
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, ২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত সম্রাট সিঙ্গাপুরে ৩৫ বার, মালয়েশিয়ায় তিনবার, দুবাইতে দুবার এবং হংকংয়ে একবার ভ্রমণ করেছেন। এছাড়া তার সহযোগী এনামুল হক আরমান ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৮ মে পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ২৩ বার ভ্রমণ করেছেন। সম্রাট ও আরমান অবৈধ অর্থ দিয়ে যৌথভাবে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।
৬ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামে আত্মগোপনে থাকা সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার সঙ্গে আরমানকেও গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ঢাকায় এনে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদও করে র্যাব।
সেদিন দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্ব একটি দল কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে সম্রাটের কার্যালয়ে অভিযান শুরু করে। এদিন নিজ কার্যালয়ে পশুর চামড়া রাখার দায়ে তার ছয় মাসের জেল দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। এরপর সম্রাটকে কারাগারে পাঠানো হয়।