৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি যুক্তরাজ্যে, খরচ বাঁচাতে দু-একবেলার আহার কমাচ্ছে ২৫ শতাংশ নাগরিক
মূল্যস্ফীতির দৈত্য সব দেশেই তাণ্ডব চালাচ্ছে। বাদ পড়েনি ব্রিটেন। বর্তমানে ব্রিটেনসহ পুরো যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে মার্গারেট থ্যাচার প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে এত বেশি পণ্যমূল্যের চাপ দেখা গিয়েছিল।
এরমধ্যেই জীবনযাপনের খরচ এতটা বেড়েছে যে গ্যাস/বিদ্যুৎ বিল বাঁচাতে ঘর উষ্ণ রাখার হিটিং সিস্টেম পারতপক্ষে বন্ধ রাখছেন প্রতি তিনজনের মধ্যে দুজন ব্রিটিশ। গাড়ি চালানো কমিয়েছেন ৫০ শতাংশ এবং প্রতি ২৫ শতাংশ কোনো কোনো বেলা না খেয়ে খরচ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন।
নিম্ন আয়ের নাগরিকদের এক-তৃতীয়াংশ জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির কারণে তারা কোনো কোনো বেলার খাবার খেতে পারেননি। মঙ্গলবার (১৭ মে) জরিপ সংস্থা ইপসোসের এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে দেশটিতে উদ্বেগ এখন গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। জরিপে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ ব্রিটিশ আগামী ছয় মাসে নিত্যপণ্যের মূল্য আরও চড়া হওয়ার শঙ্কা ব্যক্ত করেন।
ইপসোসের রাজনৈতিক গবেষণা বিষয়ক প্রধান গিডন স্কিনার বলেন, "অর্থনৈতিক পূর্বাভাসের ভিত্তিতে আগামী দিনগুলোয় আরও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে তা হয়তো বলাই যায়। এতে মানুষের জীবনযাপনে উচ্চ ব্যয়ের সংকট দূর করতে সরকারের ওপর আরও বেশি পদক্ষেপ নেওয়ার চাপ বাড়বে।"
এদিকে আজ বুধবার (১৮ মে) মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস। এতে জানানো হয়, এপ্রিল পর্যন্ত চলতি বছরে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ শতাংশ, ১৯৮২ সালের মার্চের পর যা সবচেয়ে দ্রুতগতির।
এর আগে জ্বালানির দাম বাড়ায় গত মার্চে মূল্যস্ফীতি হয় ৭ শতাংশ। কিন্তু, তার ব্যাপক প্রভাব পড়ে পাইকারি বাজারের পণ্যমূল্য। এপ্রিলে সেকারণে ভোক্তাদের খরচের বিলে ৫৪ শতাংশের মতো বিশাল উত্থান দেখা গেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির বিশ্ববাজার এখন চরম অস্থিতিশীল। এপ্রিলে যুক্তরাজ্যে পেট্রোল ও ডিজেলের রেকর্ড মূল্যে তার প্রতিফলনই দেখা গেছে।
আরও শোচনীয় পরিস্থিতির শঙ্কা করছে ব্যাংক অভ ইংল্যান্ড। কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি ধারণা করছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
মূল্যস্ফীতি সামলাতে সরকারের ওপর চাপ বাড়লেও, এখনই আরও সহায়তা বাড়াতে চাইছেন না অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। শরৎকালে গৃহস্থালি পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিল আরেকদফা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, এরপর পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে সরকারের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নয় জনতা। ইউগভের একটি জরিপে অংশ নেওয়া ৭২ শতাংশ নাগরিক জানিয়েছেন, তাদের মতে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় বাজে পারফর্ম করেছে। আগের বছরের তুলনায় এবার এমন মতপ্রকাশকারীদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
সূত্র: ব্লুমবার্গ, রয়টার্স