পদ্মা সেতু: উদ্বোধন সামনে রেখে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
পদ্মা সেতু নির্মাণের মূল কাজ শেষ হয়েছে আগেই। ২৫ জুন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন সামনে রেখে এখন চলছে শেষ মূহূর্তের প্রস্তুতি। সেতুতে রেলিং স্থাপন, রোড মার্কিং, সড়ক বাতিতে বৈদ্যুতিক সংযোগ প্রতিষ্ঠার মতো কাজগুলো শেষ করতে কাজ চলছে জোরেশোরে।
প্রায় দুই দশকের উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন স্মরণীয় করে রাখতে জোরেশোরে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে সেতু বিভাগ। এ উপলক্ষ্যে সেতু বিভাগের ১৮ উপকমিটির সভা চলছে লাগাতার। একই সঙ্গে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের প্রায় পুরোটা সময় ধরে সরকারের নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকেও থাকছে পৃথক প্রস্তুতি।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জনসভায় ১০ লাখ লোকসমাগমের আশা করছে আওয়ামী লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার ঘাট পরিদর্শনে গিয়ে এই আশার কথা জানান। বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিনিধিদলটি স্পিডবোটে বাংলাবাজার ঘাটের বিভিন্ন পয়েন্ট পরিদর্শন করে।
এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, "পদ্মাপাড়ের আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে জনসভা এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হবে। এতে ২১ জেলার ১০ লক্ষাধিক মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবে।"
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, "জনসভার পর ফানুস ওড়ানো থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ জমকালো অনুষ্ঠানসূচির আয়োজন করা হবে। দিনব্যাপী এই আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠবে পদ্মাপারের মানুষ। দীর্ঘদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে এই সভায়।"
জানতে চাইলে সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য যা দরকার, তার প্রায় সব কাজ শেষ হয়েছে। সেতু উদ্বোধনের অন্তত ১০ দিন আগে অবশিষ্ট কাজও শেষ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, "এখন প্রকল্পের মূল কাজ চলছে উদ্বোধনের প্রস্তুতিকে ঘিরে। প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার পর ল্যাম্পপোস্টে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। যেকোনো দিন পুরোদমে লাইট জ্বালানো হবে।"
আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচল করবে বলেও তিনি জানান।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়ে সেতু বিভাগের তৈরি করা সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মে পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৯৯ শতাংশ।
সেতুতে যানবাহন চলাচলের পথে রোড মার্কিংয়ের কাজ ৩০ শতাংশ বাকি আছে। সড়কবাতিতে বৈদ্যুতিক সংযোগসহ শেষ মুহূর্তের আনুষঙ্গিক কাজ চলছে।
সেতুর কংক্রিটের দেয়ালের ওপর স্টিলের রেলিং বসানোর কাজ চলমান আছে বলেও জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে সেতু উদ্বোধন করে সুধী সমাবেশে অংশ নেবেন। এরপর গাড়িতে চড়ে সেতু পার হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে আরেকটি উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ৬৪টি জেলাতেও দেখানোর ব্যবস্থা থাকবে।
সূত্র জানিয়েছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও প্রদর্শনী থাকবে। সেতুর দুই পাড়ে অতিথিদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া করোনায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য দুই পাড়েই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রিসভার সদস্য, বিশিষ্ট রাজনীতিক এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগ সূত্র।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা যৌথ সভা করেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।