ইনস্টাগ্রামের পোস্ট থেকে নতুন সাপের সন্ধান
যারা মনে করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো কেবল সময় নষ্টকারী – তাদের ধারণাটি এবার ভুল প্রমাণিত হলো। ইনস্টাগ্রামের পোস্ট থেকে সন্ধান পাওয়া গেল নতুন এক প্রজাতির সাপের। হিমালয়ের পাদদেশে চাম্বা নামের একটি গ্রামের মাস্টার্স পড়ুয়া যুবক বীরেন্দ্র ভরদ্বাজের ইনস্টাগ্রামের পোস্টের ছবি থেকে একজন জীববিজ্ঞানী সাপের সে প্রজাতিটি শনাক্ত করেছেন।
গুরু নানক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্র বীরেন্দ্র সুদীর্ঘ কোভিডকালীন লকডাউন শুয়ে-বসে কাটিয়ে দেননি। বাড়ির আঙিনা ও তার আশেপাশের ঝোপঝাড়, আদাড়-বাদাড় ছিল তার বিচরণক্ষেত্র। সেখানকার পোকামাকড়, পাখপাখালি, জন্তু-জানোয়ার, উভচর সরীসৃপের ছবি তুলে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা বীরেন্দ্রর একপ্রকার নেশায় দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। সেভাবেই গত বছরের জুনে একদিন অজান্তেই বীরেন্দ্র ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্য, সাদা-কালো ছোপওয়ালা, দাঁতাল, নেপালি গোর্খা চাকুআকৃতি মস্তকের এক ধরনের সাপের ছবি তার ইনস্টাগ্রাম থেকে পোস্ট দেয়।
ব্যাপারটি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের গবেষক জিসান মির্জার দৃষ্টি কাড়ে। মির্জা তৎক্ষণাৎ বীরেন্দ্রর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা একসাথে সাপটির ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। পরে তারা নিশ্চিত হন, সে প্রজাতির সাপ নিয়ে এর আগে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র, ম্যাগাজিন বা জার্নালে কোনোরূপ আলোচনা করা হয়নি। আশ্চর্যের কথাটি হলো, সাপটি সে অঞ্চলে ব্যাপকভাবে পরিচিত এবং সেটিকে স্থানীয়রা 'কুকরি সাপ' বলে ডাকে।
জিসান মির্জা ও বীরেন্দ্র ভরদ্বাজ একসাথে সাপটিকে নিয়ে ইভোল্যুশনারি সিস্টেমেটিকস নামক জার্নালে একটি লেখা প্রেরণ করেন। সেটিও ব্যাপকভাবে চর্চিত হয়। Oligodon গণের অন্তর্ভুক্ত হলেও সাপটি অন্যান্য সমগণভুক্তদের চেয়ে কিছু জায়গায় স্বতন্ত্র। বীরেন্দ্র ইন্ডিয়া টাইমস-কে সাক্ষাৎকার প্রদানকালে বারবার সাপটির স্বাতন্ত্র্যের ব্যাপারেই ইঙ্গিত করেন।
ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস-এর একটি টিম গবেষণার জন্য দুটো সাপ নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে একটি ছিল পুরুষ অন্যটি নারী গোত্রীয়। তারা সাপের খোলস, খুলির স্কেল, স্খলিত ত্বক প্রভৃতি নমুনাও সংগ্রহ করে। তারা সাপটির ডিএনএ সিকোয়েন্স উদ্ধার করে এর অনন্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে ঘোষণা করেন, বীরেন্দ্র ভরদ্বাজ কর্তৃক যে সাপটির ছবি তোলা হয়েছিল সেটি পুরোপুরি অনন্য, অনুক্ত ও অর্বাচীন। জিনোম সিকোয়েন্সের অনন্যতাই সকল প্রজাতিকে একে অপরের থেকে আলাদা করে।
দ্য ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড (ডবল ডব্লিউ এফ) এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছিল, হিমালয় অঞ্চলটি শুষ্ক এবং পূর্বভারতের এলাকাগুলোর চেয়ে কম জীববৈচিত্রপূর্ণ। মির্জা মঙ্গ্যাবে (Mongabay)-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পশ্চিমের জীববৈচিত্র নিয়ে অধিক গবেষণার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, 'ইনস্টাগ্রাম পোস্ট থেকে একটি নতুন সরীসৃপ প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে – এটি সত্যিই খুব মজার ব্যাপার। আমরা নিজের আঙিনার চেয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরে আবিষ্কার করতে ভালোবাসি। তাতে সমস্যা নেই। তবে এটিও মাথায় রাখা উচিত, অনেকসময় নিজের বাড়ির আঙিনাতেই দুর্লভ সব প্রজাতির দেখা পাওয়া যায়।'
সাপ ভারতের সুপ্রাচীন ধর্ম তথা সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। নতুন সাপের সন্ধান পাওয়ার বিষয়টি উত্তর ভারতীয় ধর্মপ্রাণ ও গোঁড়াস্থানীয় জনগণের ভেতর যে আলাদা উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, তাতে সন্দেহ নেই। তবে, বীরেন্দ্র ভরদ্বাজ ও জিসান মির্জাকে আবিষ্কারকের খেতাব ও খ্যাতি এনে দিয়েছে সেটি আরো সন্দেহাতীত। ইনস্টাগ্রামের সাপের ছবিগুলোই 'শাপে বর' হয়ে দেখা দিয়েছে তাদের জীবনে।