গাছ বন্ধক রেখে কার্বন নিরপেক্ষ গ্রাম বানাবে কেরালা
ভারতের কেরালা রাজ্যে জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে কেরালা স্টেট অ্যাকশন প্ল্যান বা রাজ্য পরিকল্পনার অধীনে এক নতুন ধরনের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। কেরালার ওয়ানাদ অঞ্চলটি রাজ্যের ৪ টি প্রধান জলবায়ু পরিবর্তনকেন্দ্রীক অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম।
সম্প্রতি কেরালার এক গ্রামে একটি প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়েছে যেখানে কৃষকেরা তাদের গাছ বন্ধক রেখে সুদমুক্ত ব্যাংক ঋণ নিতে পারবে। কেরালার ওয়ানাদ জেলার ছোট্ট শহর মীনানগারি তে এই ব্যাংকিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী টিএম থমাস আইজ্যাক ২০১৬ সালে প্যারিস জলবায়ু পরিবরতন কনফারেন্স থেকে ফিরে এসে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন বলে জানায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
কেরালার এই উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে একটি অসাধারণ উদ্যোগ। যা করতে হবে তা হচ্ছে শুধু একটি গাছ রোপণ করা এবং তিন বছর পর তা বাঁধা রেখে কৃষক সুদমুক্ত লোন নিতে পারবে। এভাবে দশ বছর পর পর এই ব্যবস্থা নবায়ন করা যাবে। শুধুমাত্র গাছ যদি কেটে ফেলা হয় তাহলেই তার এই টাকা শোধ করতে হবে।
সম্প্রতি দ্য গার্ডিয়ান এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায় যে শীজা নামের ৪৬ বছর বয়সী এক স্থানীয় চাষী গত এক মাসে ৫৩ টি গাছ বন্ধক রেখে বেশ ভালো মুনাফা করেছেন । তিনি প্রতি গাছের জন্য ৫০ রুপি করে মোট ২৬৫০ রুপি পেয়েছেন।
কেরালায় মশলা উৎপাদন প্রধান চাষাবাদের ফলে দীর্ঘদিন ধরে সেখানে দুর্বল কৃষি ব্যবস্থা চলছে এবং সেই সাথে জীববৈচিত্রও অনেক হ্রাস পেয়েছে। আগে যে অঞ্চল বেশ ঠান্ডা বলে পরিচিত ছিল সেখানে এখন তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। কৃষকেরা অর্থাভাব দূর করতে নিজেদের গাছ বিক্রি করে দিচ্ছেন।
স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান বীনা বিজয়ান জানান যে ঋণের সুদ পঞ্চায়েত দিবে এবং কৃষককে দিতে হবে শুধু মূল টাকা। তিনি আরো জানান, রাজ্য সরকার এই প্রজেক্টে ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এই ডিপোজিট থেকে প্রাপ্ত মুনাফা ব্যবহৃত হবে কৃষকদের দেয়া লোনের সুদ প্রদান করতে।
কেরালা স্টেট অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী রাজ্য সরকারের লক্ষ্য হলো এই ব্যাংকিং স্কিমের মাধ্যমে ওয়ানাদ জেলার মীনানগারি গ্রামকে একটি কার্বন নিরপেক্ষ অঞ্চলে পরিণত করা।
মীনানগাড়ি গ্রামে নেয়া এই প্রজেক্টই ভারতে এ ধরনের প্রথম উদ্যোগ যা একটি অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা বদলে দিচ্ছে।
স্থানীয় পঞ্চায়েত ৩৪ ধরনের গাছের তালিকা করেছে যেগুলো কৃষকেরা রোপণ করতে পারবে। এর মধ্যে রয়েছে আম, কাঁঠাল ও পাইন গাছ। উদ্যোক্তারা আশা করছেন যে এই প্রজেক্টের ফলে বড় পরিসরে অঞ্চলের কৃষির দৃশ্য পাল্টে দেয়া যাবে। সেই সাথে ফল উৎপাদনের মাধ্যমে আরো টেকসই ও দেশকেন্দ্রিক ফল উৎপাদন শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
কেরালায় এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেয়া এজেন্সী 'থানাল' এর প্রতিষ্ঠাতা জয়াকুমার সি বলেন , "কেরালা রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে কম মাথাপিছু আয় হচ্ছে ওয়ানাদ অঞ্চলের। তাই আমরা এই অঞ্চলকে মাত্রাতিরিক্ত শিল্পায়নে বাধ্য না করেই কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার চেষ্টা করব।"