বন্ধ ফ্ল্যাটে ৪০ দিন বাঁচল পোষা বিড়াল
বিশ্ব মহামারির এই যুগে পৃথিবীজুড়েই ঘটছে নানা বিস্ময়কর ঘটনা। এমনই এক ঘটনার স্বাক্ষী হলেন উহানের এক নাগরিক। করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে গত জানুয়ারির শেষ দিকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি ও তার পরিবারের সকল সদস্য।
এই সময়ে টানা ৪০ দিন বাড়িতে একা থাকা আদুরে বিড়ালটি যে শুধু বেঁচে গেছে তাই নয়, বরং ফুটফুটে চারটি ছানার জন্ম দিয়েছে। মা ও ছানা বিড়ালগুলো সুস্থ রয়েছে।
লি লি নামে ব্রিটিশ শর্ট হেয়ার প্রজাতির ওই পুষি বেড়ালটির এই দৈব টিকে থাকাকে দেখা হচ্ছে ভাইরাস প্রতিরোধের যুদ্ধে উহানবাসীর লড়াকু চেতনার প্রতীক হিসাবে।
পোষা প্রাণীরা সাধারণত তাদের খাবার এবং যত্নের জন্য মানুষের ওপর নির্ভরশীল। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিস্তার রোধে আমরা মানুষেরা যখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার নিয়ম মানতে হিমশিম খাচ্ছি, তখন লি লি প্রমাণ করল, প্রাণীদের থেকে আমাদের এখনো অনেক কিছু শেখার আছে। খবর ওডিটি সেন্ট্রালের।
এদিকে লি লির মনিব পরিবার যখন হাসপাতালে যায়, তখন সে ছিল গর্ভবতী। পরিবারের শেষ সদস্য হিসাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বিড়ালটির আসল মালিক ভর্তি হন গত ২৫ জানুয়ারি।
ওই সময়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তিনি কাউকে বেড়ালটি দেখাশোনা করার ভার দিয়ে যেতে পারেননি। কারণ বন্ধুবান্ধব, স্বজনদের সকলেই তখন যার যার প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত। পাশাপাশি লি লি নিজেও ভাইরাস আক্রান্ত কি না, সেটা তার মালিক জানতেন না।
এজন্য হাসপাতালে যাওয়ার আগে তিনি লি লি যেন নিরুপদ্রবে বাচ্চার জন্ম দিতে পারে, সেজন্য একটি বিছানা বানিয়ে রেখে যান। লি লি ছিল টয়লেট ট্রেইন্ড। আর বাথরুমে খুলে রেখে যান একটি ২০ পাউন্ড ওজনের ড্রাই ক্যাটফুডের প্যাকেট।
খুলে রেখেছিলেন বারান্দার দরজা, সেখানে একটি অ্যাকুরিয়ামে মাছ ও কচ্ছপ ছিল। আর ছিল স্বচ্ছ পানি প্রবাহের ব্যবস্থা। এসব ব্যবস্থায় লি লি কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারবে বলে আশা করেছিলেন ওর মালিক।
এরপর তিনি নিজেও ভর্তি হলেন হাসপাতালে, সেখানে সুস্থ হতে গিয়ে কেটে গেল টানা ৪০ দিন।
বাড়ি ফেরার দিন মনটা কিন্তু তার বিষাদে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। ভেবেছিলেন ঘরে ফিরে দেখতে পাবেন লি লি মরে পড়ে আছে। কিন্তু তার জন্য বাড়িতে অপেক্ষা করছিল অন্য রকম বিস্ময়।
চীনের ভিডিও প্লাটফর্ম পিয়ার-এ সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি। লি লির মনিব বলেন, দরজা খুলেই আমি দেখি বাড়িজুড়ে চারটি বিড়াল ছানা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি আনন্দে অভিভূত হয়ে গেলাম, আর তখনই আমার কাছে ছুটে এলো লি লি।
'নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে হলো আমার। করোনাভাইরাসের মারণ থাবা থেকে মুক্তি পেয়েও আমার এত আনন্দ হয়নি। এতদিন ওর কোনো যত্ন নিইনি। তারপরও সে কিভাবে বেঁচে ছিল, সেটাই এক বিস্ময়। তবে আমি ওর মধ্য দিয়েই সমগ্র মানবজাতি বেঁচে যেতে পারে- এমন আশার আলো দেখতে পাই।
আর তাই তো লি লির চার ছানার নাম জিয়াওউ, হানহান, জিয়াওজিয়া এবং ইউইউ রেখেছেন তিনি। এসব শব্দ একত্র করলে চীনা ভাষায় অর্থ দাঁড়ায় 'লড়াকু উহান'।
ওর মালিক আরও জানান, এতদিনে সে মাত্র অর্ধেক পাউন্ড ওজন হারিয়েছে। ছানারা সবাই হৃষ্টপুষ্ট। বাড়ির একমাত্র নিখোঁজ 'বাসিন্দা' একটি পোষা মাছ। তবে নিশ্চিত সে লি লি এবং তার ছানাদের উদরপূর্তি করেছে!