৬৮ বছরের বন্দিত্বের পর কারাগার থেকে বেরিয়ে বললেন, স্বাধীনতা সুন্দর
জো লিগন, যাকে মনে করা হয় আমেরিকার সবচেয়ে বেশি বয়স্ক এবং সর্বোচ্চ কারাভোগ করা একজন কিশোর অপরাধী, তিনি সম্প্রতি ছাড়া পেয়েছেন। প্রায় সত্তর বছর জেলে কাটাবার পর তিনি পেনসিলভানিয়া কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
লিগন ১৯৫৩ সালে কারাবন্দী হন, তখন তার বয়স ছিল ১৫। ফিলাডেলফিয়ার রাস্তায় আরও দু চারজন ছেলের সঙ্গে এক হয়ে মাতলামি এবং ডাকাতি করতে গেলে বাধা দেয়ায় তারা কিছু লোককে ছুরিকাঘাত করেন। এদের মধ্যে ছয়জন গুরুতর আহত এবং দুজন নিহত হয় বলে অভিযোগ আনেন ফিলাডেলফিয়ার তদন্ত কর্মকর্তা চার্লস পিটস এবং জ্যাকসন হ্যাম। এই অপরাধের দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
কারাগার থেকে মুক্তির পর লিগন সিএনএনকে বলেন, "বলা যায় আমাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল রাস্তায় থাকার অপরাধে!'
শুনানিতে যেখানে লিগনকে একটি ফার্স্ট ডিগ্রি মার্ডারের জন্য দায়ী করা হয়েছে এবং লিগন সেই আট ব্যক্তির মধ্যে অন্তত একজনকে ছুরিকাঘাত করার কথা স্বীকার করেছেন, সেখানে লিগনের আইনজীবি ব্র্যাডলি ব্রিজ দাবি করেছেন যে লিগন কোনোদিন কাউকে খুন করেননি।
ব্রিজ আরও বলেন, "যে কিশোর ছেলেটি ১৯৫৩ সালে এসব অপরাধ করেছিল সেই মানুষটি আর নেই। এখন ২০২১ এ যে মানুষটি কারাগার থেকে বেড়িয়ে এলো সে একজন বৃদ্ধ, তার দ্বারা আর কোন ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই। সে তার ভুলের সাজা পেয়েছে, এখন তার অধিকার আছে বাকি জীবন মুক্ত অবস্থায় কাটানোর।"
কিন্তু এই মুক্ত জীবনের স্বাদ গ্রহণের জন্য লিগনকে পাড়ি দিতে হয়েছে এক লম্বা পথ।
১৯৭০ সালে পেনসিলভানিয়ার গভর্নর লিগন ও তার সঙ্গীদের ক্ষমা ঘোষণা করেন এবং আশ্চর্জজনকভাবে দুজন সেই অফার নিলেও লিগন তা প্রত্যাখান করেন।
২০১৭ তে মার্কিন সুপ্রিমকোর্ট তাকে আরও একবার প্যারোলে মুক্তি দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হলে তিনি সেটিও প্রত্যাখান করেন।
২০১৬ সালে মিলার অ্যালাবামার ২০১২ সালের কেস, যেখানে মিলারকে প্যারোলের শর্ত ছাড়াই যাবজ্জীবন দেয়া হয় তা অন্যায্য ছিল বলে ঘোষণা দেয় কোর্ট। ফলে লিগনেরও ৩৫ বছরের সাজা মওকুফ হয় এবং ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকায় তিনি প্যারোলে মুক্তির উপযুক্ত হন।
কিন্তু প্যারোলে মুক্তি তাকে স্বাধীনতা দিবেনা, থাকতে হবে নজরদারির মধ্যে; তাই সেই প্রস্তাব আবারও প্রত্যাখান করেন লিগন।
১৫ বছর ধরে লিগনের প্রতিনিধিত্ব করা আইনজীবি ব্রিজ জোর দিয়ে বলেন যে কিশোর হিসেবে তখন লিগনকে যে সাজা দেয়া হয় তা ছিল অসাংবিধানিক। পেনসিলভানিয়া ইন্টারমিডিয়েট অ্যাপিলেট কোর্টে একবার শুনানি দিয়ে ব্যর্থ হলেও, পরে ব্রিজ লিগনের কেসকে ইউএস ফেডারেল কোর্টে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। ব্রিজ ২০২০ সালের নভেম্বরে লিগনের মামলাটি জিতেন এবং এর ফলেই ২০২১ সালে এসে লিগন পান সেই কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।
মুক্তি যেহেতু পেয়েই গেছেন, তাই এখন লিগনকে সমাজে সুন্দরভাবে বসবাস করার ও মানিয়ে নেয়ার উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হচ্ছে। ফিলাডেলফিয়া ভিত্তিক সংগঠন ইয়ুথ সেন্টেন্সিং অ্যান্ড রিএন্টারিং এর একজন সাবেক কর্মী জন পেস লিগনকে এই কাজটি করতে সাহায্য করছেন।
পেস নিজেও ১৭ বছর বয়সে অপরাধের জন্য সাজাপ্রাপ্ত হন। ৩১ বছর জেলে কাটিয়ে এসে বের হবার পর পেসের মনে হয়েছিল এই মুক্ত জগতে তিনি এক ধরনের অসুস্থতা বোধ করছেন।
নতুন এক পৃথিবীতে পদার্পণ
পেস বললেন এক অদ্ভুত অনুভূতির কথা, "আপনি এতগুলো বছর কাটিয়েছেন এমন এক জায়গায় যেখানে শুধুই বাধা আর বাধা, যেখানে কারো সাথে কথা বলা বা যোগাযোগে ছিল নানা সীমাবদ্ধতা। এখন হুট করে মুক্ত হয়ে বাইরের পৃথিবীতে এলে আপনার কি মনে হবে যখন আপনি বুঝবেন যে এখন আপনি চাইলে সবকিছু করতে পারেন?"
ব্রিজ, পেসসহ আরও কয়েকজন কাজ করছেন লিগনকে এই নতুন অবস্থার সাথে মানিয়ে নিতে।
লিগনের জন্য একটি নতুন থাকার বাড়িও খুঁজে দেয়া হয়েছে যেখানে তিনি একটি ফিলাডেলফিয়া পরিবারের সঙ্গে থাকছেন।
লিগন জানালেন যে তিনি অন্যদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে চান, "আমি মানুষকে সাহায্য করতে ও খুশি রাখতে উন্মুখ হয়ে আছি, যেভাবে তারা আমায় সাহায্য করছে। এছাড়াও আমি চাই তরুণ প্রজন্মের সাথে মিশতে, কিছু রিপোর্টার ও আমার মত বৃদ্ধ প্রজন্মের সাথেও, যাতে আমি আমার গল্পটি সবাইকে বলতে পারি।"
মুক্তির একদিন পরে যখন লিগনকে জিজ্ঞেস করা হলো যে এই ফিরে আসার স্বাধীনতা তার কেমন লাগছে, লিগনের এক শব্দের উত্তর ছিল, "সুন্দর, সুন্দর!"