বেস্টসেলার লেখকের প্রকাশনা উৎসবে কেউ এলো না!
সুজান ইয়াং নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্টসেলার লেখক। গতমাসে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের একটি বুকশপে লেখক নিজের ২২তম উপন্যাসের প্রকাশনা উৎসবের করেন। দীর্ঘ এক বছর সময় ব্যয় করে লেখা বইটি নিয়ে ইয়াং খুবই আশাবাদী থাকলেও সে আয়োজনে সামিল হননি কেউই! খবর বিজনেস ইনসাইডারের।
এ সম্পর্কে শিশুতোষ বইয়ের লেখক ইয়াং বলেন, "বুকশপের পক্ষ থেকে বেশ ভালোই প্রচারণা করা হয়েছিল। এমনকি তারা নিজেদের নিউজলেটারেও এ তথ্য দিয়েছিল। টুইটও করেছে। সেখানে অনেকেই মন্তব্য করেছিল যে, তারা প্রকাশনা উৎসবে আসবেন।"
গত ২৮ মার্চ ফ্যান্টাসি-রহস্য ঘরানার 'ইন নাইটফল' নামের এই বইটির প্রকাশনা উৎসবের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এমনকি উৎসবে দর্শকদের জন্য ইয়াং উপহার হিসেবে রেখেছিলেন ক্যান্ডি, পোস্টকার্ড ও সানগ্লাস।
তবে প্রকাশনা উৎসবে লেখক পৌঁছে হতাশ হয়ে লক্ষ করেন, দর্শক হিসেবে কেউই আসেনি। এ সম্পর্কে ইয়াং বলেন, "প্রথমদিকে আমরা খুবই বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যাই। কেননা অনেকেই বলেছিল যে, তারা আসবেন। তখন আমরা ভাবতে থাকি যে, আমরা কি সঠিক সময় বলেছিলাম? আমরা কি সঠিক তারিখ দিয়েছিলাম?"
বিজনেস ইনসাইডারকে ইয়াং জানান, এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে তিনি নিজেকে সামলাতে একাকী কান্না করেন। পরবর্তীতে কোনও দর্শক ছাড়াই উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়। দর্শক না থাকায় বুকশপের স্টাফরাই বইটি সম্পর্কে লেখকের কাছে জানতে চান। বুকশপ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বিষয়টি গোপন করতে লেখককে অনলাইনে শুধু তার ছবিই পোস্ট করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়।
এ সম্পর্কে ইয়াং বলেন, "আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়তো সেটাই করতো। কিন্তু আমি তা করিনি। সম্ভবত আমি নিজের জন্য খুব বেশিই মন খারাপ করেছিলাম।"
পরে ১৭টি খালি চেয়ারের ছবি তুলে ইয়াং প্রকাশনা উৎসব নিয়ে টুইট করেন। ক্যাপশনে ঘটনাটিকে নিজের ক্যারিয়ারের 'লো পয়েন্ট' হিসেবে উল্লেখ করে বাড়ি ফেরার পুরো পথে কেঁদেছেন বলেও অকপটে স্বীকার করেন তিনি।
৪৭ বছর বয়সী ইয়াং বলেন, "পরেরদিন আমি ঘুম থেকে উঠে খুবই বিব্রতবোধ করতে থাকি। আমার মনে হয় যে, আমার টুইটটি মুছে ফেলা উচিত। কেউ যে আমার অনুষ্ঠানে আসেনি সেটা সবাইকে জানানোর দরকার নেই। আবেগ নিজের মধ্যেই রাখা উচিত।"
আশ্চর্যজনকভাবে ইয়াং এর টুইট দেখে অন্য লেখক, সঙ্গীতশিল্পী ও স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ানরা নিজেদের একই ধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার কথা খোলাসা করেন। এমনকি সেসব অনুষ্ঠানের ছবিও তারা টুইটারে শেয়ার করতে থাকেন।
এলেক্স রাইডার সিরিজের লেখক এন্টনি হরোউইটজ, দ্য মিথবাস্টার শো এর উপস্থাপক কারি বাইরন ও প্রিন্সেস ডায়নার ভাই চার্লস স্পেন্সারও একই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন বলে স্বীকার করেন।
ইয়াং এর করা টুইটটি গত শুক্রবার পর্যন্ত ৮০ লাখ বার দেখা হয়েছে। এ বিষয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের আরেক বেস্টসেলার লেখক মাইকেল নর্থরপ ২০১৫ সালের নিজের দর্শকশূন্য ইভেন্টের একটি ছবি দিয়ে বলেন, "ইয়াং এর প্রকাশিত ছবিটি অনেকটা আমার ছবির মতোই। ইয়াং এর মতো সেই ঘটনা আমাকেও খুব পীড়া দিয়েছিল। কিন্তু পরেরদিন আমি যখন একটি স্কুলে যাই, তখন দেখি শত শত বাচ্চার হাতে আমার বই। এই মুহূর্তটি আনন্দের।"
ইয়াং অনলাইনে পার্ট-টাইম শিক্ষক হিসেবে ইংরেজি শেখান। এর মাঝেই সাপ্তাহিক ছুটির সময়কে কাজে লাগিয়ে কিংবা কখনো রাত জেগে তিনি বইটি লিখেছেন।
ইয়াং বলেন, "সাধারণত কয়েকটি ইভেন্টের মাধ্যমে বইয়ের প্রকাশনা উৎসব করা হয়। কিন্তু 'ইন নাইটফল' উপন্যাসের ক্ষেত্রে আমি একটি ইভেন্টই করতে চেয়েছি। কেননা প্রতিটি ইভেন্টের ক্ষেত্রে মার্কেটিং ও প্রমোশনে অনেক পরিশ্রম করতে হয়।"
অন্যদিকে লেখকের বহু সোশ্যাল মিডিয়া অনুসারী জানিয়েছেন, তারা প্রকাশনা উৎসবের তথ্য জানিয়ে করা পোস্টগুলো দেখেননি। তাই ভবিষ্যতে ভিন্ন পদ্ধতিতে প্রচারণা করার চিন্তা করছেন এই লেখক।
ইয়াং বলেন, "এখন থেকে আমি স্থানীয় সংবাদপত্র ও স্কুলগুলোতেও প্রকাশনা উৎসবের প্রচারণা করবো। প্রথাগত প্রচারণার বাইরেও ভিন্নধর্মী চিন্তা করবো। এমনকি ভার্চুয়াল প্রকাশনা উৎসব করা যায় কি-না, সেটা সম্পর্কেও ভাবতে হবে।"
ইয়াং এর আলোচিত টুইট যেন 'ইন নাইটফল' বইয়ের জন্য আশীর্বাদ নিয়ে এসেছে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অ্যামাজন ইউকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে থাকা বইটির সকল কপি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও একটি স্কুলের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য লেখককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।