রুহ আফজা ভারতীয় পানীয়, কারণ এর বয়স বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের চেয়েও বেশি: দাবি হামদর্দ ইন্ডিয়া প্রধানের
দশকের পর দশক ধরে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যে পানীয়টি ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে অত্যন্ত জনপ্রিয়, তার নাম রুহ আফজা। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহের মধ্যে এবং বিশেষ করে, রমজান মাসে বিভিন্ন দোকানে শোভা পেতে থাকে রুহ আফজার বোতল। এমনকি সাধারণ সময়েও সারা বছরই ফার্মেসিতেও পাওয়া যায় এই পানীয়। সারাদিন রোজা রাখার পর রুহ আফজার সুন্দর সুবাসযুক্ত শরবত এক নিমিষেই তৃপ্ত করে দেয় মানুষকে।
ভারতে রুহ আফজার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে থাকলেও এটি যে শুধুমাত্র ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তা আগেই বলা হয়েছে। ভারতের প্রতিবেশী যে দুটি দেশে রুহ আফজা জনপ্রিয়, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে দুটি দেশই ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের অন্তর্গত।
সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্ট ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম আমাজন ইন্ডিয়াকে নির্দেশ দিয়েছে, পাকিস্তানি একটি প্রতিষ্ঠানের তৈরি 'রুহ আফজা' নামক একটি পানীয় তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে নিতে; যাতে করে ভারতীয় ভোক্তা শ্রেণীর মধ্যে আসল রুহ আফজা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়।
ভারতীয় একটি এনজিও, হামদর্দ ন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের দায়ের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এ রায় দিয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, আমাজন ইন্ডিয়াতে বিক্রয়ের জন্য যে 'রুহ আফজা' তালিকাভুক্ত করা হয়েছে তা হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ভারত) এর উৎপাদিত নয়। কিন্তু পাকিস্তানি কোম্পানিটিও তাদের তৈরি রুহ আফজার প্যাকেজিং এর গায়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত কোনোকিছু উল্লেখ করেনি।
তবে জনপ্রিয় এই পানীয়টির ইতিহাস জানতে হলে ফিরে যেতে হবে দেশভাগেরও আগে, অবিভক্ত ভারতে, যখন পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নামক আলাদা আলাদা দেশের অস্তিত্ব ছিল না। হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ভারত)-এর খাদ্য বিভাগের সিইও ও ট্রাস্টি হামিদ আহমেদ হামদর্দ এর প্রতিষ্ঠাতা হাকিম হাফিজ আবদুল মাজিদের প্রপৌত্র। ১৯০৬ সালে আব্দুল মাজিদ হামদর্দ প্রতিষ্ঠা করেন। হামিদ আহমেদ জানিয়েছেন, 'রুহ আফজা'র ট্রেডমার্ক হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ভারত) এর মালিকানায়।
"অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান (অন্য কোনো এন্টারপ্রাইজ) সরাসরি বা অসৎ উপায়ে ভারতে রুহ আফজা বিক্রি করতে পারবে না। কারণ এটা ভারতেই উৎপাদিত। এজন্য আমরা আমাজন ইন্ডিয়া এবং অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা করেছি এবং তারা এ পণ্যটি সরিয়ে নিতে অক্ষমতা প্রকাশ করেছে। ফলে আর কোনো উপায় না দেখে আমরা হাইকোর্টে আপিল করেছি", বলেন হামিদ আহমেদ।
হামিদ আহমেদ ব্যাখ্যা করে বলেন, "১৯০৬ সালে শুধু একটিমাত্র হামদর্দ ছিল। কিন্তু ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর আমার প্রপিতামহ তার এক ছেলেসহ ভারতে থেকে যান। তার অন্য ছেলে হাকিম মোহাম্মদ সাঈদ পাকিস্তানে চলে যান এবং সেখানে আরেকটি হামদর্দ প্রতিষ্ঠান চালু করেন। তারপর ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশের জন্ম হলো, সেখানে হামদর্দ বাংলাদেশ নামে আমরা তৃতীয় হামদর্দ প্রতিষ্ঠানটি চালু করি। কিন্তু শুধুমাত্র হামদর্দ থেকেই রুহ আফজা উৎপাদিত হয়।"
হামিদ আহমেদ জানান, ১৯০৭ সালে হামদর্দের উৎপাদিত প্রথম পণ্যটিই ছিল রুহ আফজা। তার ভাষ্যে, "এই পানীয়টির (রুহ আফজা) বয়স পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বয়সের চেয়েও বেশি! এটা একটা ভারতীয় পণ্য এবং আমরা এটিকে অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত থেকে বাঁচাতে চাইছি।"
তিনি আরও জানান, শরবত বা পানীয় হয়ে ওঠার আগে শুরুতে রুহ আফজা ছিল এক প্রকার ওষুধের মতো। এর মধ্যে শীতলকারক উপাদান রয়েছে, তাই গ্রীষ্মকালে এটির চাহিদা অনেক বেশি থাকে।
"বছরের পর বছর ধরে রুহ আফজার উপাদান সেই একই রয়ে গেছে, শুধু নতুন নতুন প্রযুক্তি আসায় উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। ১৯০৭ সালে যখন এটি প্রথম বাজারে আসে, তখন ছোট একটা রান্নাঘরে বানানো হতো রুহ আফজা। কিন্তু এখন কারখানায় আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয় এই পানীয়। রুহ আফজা তৈরি করতে শীতলকারক সবজি্র নির্যাস, ফলের রস এবং সুগন্ধি ব্যবহার করি। বর্তমানে আমরা সুগার-ফ্রি বা চিনিমুক্ত রুহ আফজাও বাজারে নিয়ে এসেছি", বলেন হামিদ আহমেদ।
সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস