দিনে চার কাপ চা পানে দূরে থাকে ডায়াবেটিস: চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণা
চায়ের নেশার জন্য বন্ধুমহলে খ্যাতি/কুখ্যাতি যাদের, তাদের এই আসক্তিকে খাটো করে দেখা যাবে না আর। কারণ চীনের বিজ্ঞানীরা তাদের এক সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে জানাচ্ছেন, প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে বা অন্তত চার কাপ চা পানে টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই দূর হয়।
গবেষণার সূত্রে তারা আরও জানান, ১০ বছর ধরে চার কাপের বেশি চা পান (অবশ্যই মিষ্টি ছাড়া) করলে এ ধরনের গুরুতর ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে ১৭ শতাংশ।
চীনের উহান ইউনিভার্সিটি অভ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বিজ্ঞানী ও গবেষণা নিবন্ধের প্রধান লেখক শিইয়িং লি বলেন, 'আমাদের প্রাপ্ত ফলাফল খুবই চমকপ্রদ, কারণ এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে দৈনিক চার কাপ চা পানের মতো নিতান্ত সাধারণ উপায়ে মানুষ টাইপ টু ডায়াবেটিসের মতো গুরুতর ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে'।
লি মনে করেন, চা থেকে পাওয়া সুরক্ষা আরও বাড়তে পারে তাতে দুধ মেশালে। যদিও তার সাত সদস্যদের বিজ্ঞানী দলটি চায়ে দুধ মেশানোর প্রভাবকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করেননি। তবে আগের কিছু গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে যে, ডেইরি পণ্যের ডায়াবেটিক-প্রতিরোধী একটি গুণও আছে।
সেই সূত্রে লি বলেন, 'তাই আমরা মনে করি, চায়ে দুধ থাকলে ডায়াবেটিক প্রতিরোধ আরও শক্তিশালী হবে। দুধ থাকায় চায়ের কার্যকারিতা বাড়তে পারে'।
আজ রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) গবেষণার এই চাঞ্চল্যকর ফলাফল সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অভ দ্য ডায়াবেটিস- এর বার্ষিক সভায় তুলে ধরার কথা রয়েছে এই বিজ্ঞানীর।
সাম্প্রতিকতম বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের জন্য আগে করা ১৯টি গবেষণার মেটা-এনালাইসিস করেন গবেষকরা। যার আওতাভুক্ত ছিল– আমেরিকা, এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশের ১১ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ।
এ বিশ্লেষণে দেখা যায়, কালো, সবুজ এবং চীনের একটি ঐতিহ্যবাহী চায়ের ধরন ওলন টি সেবনের সাথে ডায়াবেটিক ঝুঁকি কমার একটি 'উল্লেখযোগ্য সমান্তরাল সম্পর্ক' রয়েছে।
যারা চা পান করেন না, তাদের তুলনায় যারা এক, দুই বা দৈনিক তিন কাচ চা পান করেন–তাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে ৪ শতাংশ। কিন্তু যারা দিনে অন্তত চার কাপ বা তার বেশি পান করেন তাদের ক্ষেত্রে এটি কমে ১৭ শতাংশ। নারী ও পুরুষ উভয় লিঙ্গের ব্যক্তির মধ্যেই সুফল প্রাপ্তির সামঞ্জস্য ছিল। অর্থাৎ, লিঙ্গভেদে এর তারতম্য হয়নি।
চা কেন ডায়াবেটিস প্রতিরোধী হতে পারে–জানতে চাইলে লি বলেন, 'পলিফেনলের মতো চায়ে থাকা বিশেষ কিছু উপাদান রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে পারে, তবে সেজন্য সক্রিয় এসব জৈব উপাদান উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দরকার হবে।'
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান