মহুয়া খেয়ে মাতাল হয়ে গভীর ঘুম দুই ডজন হাতির: জাগাতে হলো ঢাকঢোল পিটিয়ে
ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের কেওনঝার জেলার শিলিপদ জঙ্গলে দুই ডজন হাতিকে মাতাল হয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। গ্রামবাসীর মতে মহুয়া খেয়েই হাতিগুলোর এ অবস্থা হয়েছিল। গত বুধবার (নয় নভেম্বর) এই অদ্ভুত ঘটনাটি ঘটে। খবর পিপল-এর।
হাতির পালটির মধ্যে ছিল নয়টি পুরুষ ও ছয়টি স্ত্রী হাতি, তার বাকি নয়টি ছিল বাচ্চা হাতি।
গ্রামবাসীরা এক প্রকার দেশি মদ তৈরির জন্য জঙ্গলে পাত্রে করে পানিতে মহুয়া ভিজিয়ে এসেছিলেন। এরপর বুধবার ভোরে সেগুলো দেখতে গিয়ে হাতিদের ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
নরিয়া শেঠি নামে এক গ্রামবাসী দ্য প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে বলেন, 'আমরা সকাল ছয়টার দিকে মহুয়া তৈরির জন্য জঙ্গলে গিয়েছিলাম। পৌঁছে দেখি সব পাত্র ভাঙা এবং মহুয়াও অবশিষ্ট নেই। হাতিগুলো সেখানেই ঘুমাচ্ছিল। তারা সম্ভবত মহুয়া ভেজানো পানি পান করে মাতাল হয়ে পড়েছিল।'
প্রথমে গ্রামবাসীরাই হাতিগুলোকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হলে তারা বন দপ্তরে খবর দেন। কর্মকর্তারা এলে তাদের সাহায্যে মাদল ও ঢাকঢোল বাজিয়ে হাতিগুলোর ঘুম ভাঙানো হয়। এরপর দুলতে দুলতে তারা জঙ্গলের ভেতর চলে যায়।
তবে ভারতে বন্যপ্রাণী উদ্ধার ও পুনর্বাসনে সহায়তাকারী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস-এর প্রধান নির্বাহী কার্তিক সত্যনারায়ণ ঘটনাটি নিয়ে কিছুটা সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, 'সাধারণত একটি হাতি বাকিদের দেখাশোনা করে। তাই এটি একটু অস্বাভাবিক ঠেকছে।'
তবে ভারতীয় বন্য হাতিদের কাছে মহুয়া বেশ জনপ্রিয় বলেও জানান তিনি।
কার্তিক বলেন, 'তারা এটি পছন্দ করে। এটি বিশুদ্ধ, সুস্বাদু এবং বেশ শক্তিশালী। কোনো রান্নাঘর থেকে আসা গন্ধ পেলে এটি খাওয়ার জন্য তারা দেওয়ালও ভেঙে ফেলতে পারে।'
হাতিদের মহুয়ার প্রতি আকর্ষণ মাঝে মাঝে ভয়ানক রূপ নিতে পারে।
চলতি বছরের এপ্রিলে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জয়সিংহ নগর জঙ্গলে এক হাতির পাল মহুয়া সংগ্রহকারী পাঁচ ব্যক্তিকে মেরে ফেলে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামবাসীদের জঙ্গলের হাতি থেকে দূরে থাকার এবং মহুয়া ভিজিয়ে রাখা বন্ধের সতর্কবার্তা জারি করেছিলেন মধ্যপ্রদেশের প্রধান বন্যপ্রাণী তত্ত্বাবধায়ক জে এস চৌহান।
ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টল-এর জীববিজ্ঞানী স্টিভ মরিস ন্যাশনাল জিওগ্রাফিককে বলেন, 'মদ তৈরির জন্য ভিজিয়ে রাখা ফল খেয়ে হাতিরা তাদের মস্তিষ্ক উষ্ণ করে। তবে হাতি যে মাতাল হতে পারে তার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।'