২১ বছরে পা রাখলো বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মুরগি পিনাট
মার্সি পার্কার ডারউইন ও তার স্বামী বিল যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে একটি 'নো-কিল' খামারের মালিক। তাদের এ খামারে কুকুর, বিড়াল এবং মুরগি, ময়ূর ও হাঁসসহ নানা পাখি রয়েছে।
২১ বছর আগের সেই দিনটির কথা এখনও মনে আছে ডারউইনের; সেদিন মুরগির যে ডিমগুলো ফুটে বাচ্চা হওয়ার কথা ছিল তার মধ্যে একটি ডিম দেখে মনে হয়েছিল এটি পঁচা- যে কারণে মা মুরগি ওই ডিমটি ফেলে চলে গিয়েছিল। তিনি ডিমটি হাতে নিয়ে কচ্ছপদের খাওয়ার জন্য পুকুরে ফেলে দিতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু ঠিক তখনই ভেতর থেকে ক্ষীণ কিচিরমিচির আওয়াজ পেলেন।
"দ্বিতীয়বার কিচিরমিচির আওয়াজ পাওয়ার পর বুঝতে পারলাম ডিমের ভেতরে বাচ্চাটা জীবিত আছে কিন্তু ডিমের খোসা ভেঙে বেরিয়ে আসার মতো 'এগ টুথ' নেই। ডারউইন আরও ভালোভাবে ডিমটির দিকে তাকালেন এবং লক্ষ্য করলেন ডিমের খোসার ওপর খুবই হালকা একটা ফাটলের দাগ দেখা যাচ্ছে। তখন তিনি মুরগির বাচ্চাটাকে একটু সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
"আমি খুব সাবধানে ডিমের খোলস ভেঙে বাচ্চাটাকে বের করে আনলাম, আমার হাতের ওপর সেই ছোট্ট বাচ্চাটা..." বলেন ডারউইন।
তিনি মুরগির বাচ্চাটাকে এর মায়ের কাছে দিয়ে আসতে গেলেন, কিন্তু মা মুরগি তাকে নিলো না। তাই ডারউইন বাচ্চাটাকে বাড়িতে নিয়ে গেলেন, তাকে একটা হিট ল্যাম্পের নিচে রাখলেন এবং বাচ্চাটাকে আস্তে আস্তে খাবার ও পানি খাওয়া শেখাতে লাগলেন। তিনি বাদামি রঙের মুরগির বাচ্চাটার নাম দিলেন 'পিনাট'।
এরপরে কেটে গেছে ২০টি বছর। ডিমের খোসা ভেঙে বের করে আনা বাচ্চাটা এখনও ডারউইনের লিভিংরুমে হেঁটে বেড়ায়, কখনো বা তার কোলে এসে বসে। তার এই আদরের ব্যানটাম মুরগি এখন একটি বিশ্বরেকর্ডের মালিক; গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস পিনাটকে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত মুরগি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বর্তমানে মিশিগানের চেলসি শহরে বসবাসরত অবসরপ্রাপ্ত লাইব্রেরিয়ান, ৭১ বছর বয়সী ডারউইন বলেন, "একটা মুরগি গড়ে ৫ থেকে ৮ বছর পর্যন্ত বাঁচে, সেটাই অনেক ভাগ্যের ব্যাপার বলে মনে করা হয়। পিনাট খুবই স্মার্ট ও সাহসী একটা মুরগি- সকালবেলা সে ব্লুবেরি ইয়োগার্ট না পেলে, একথা আমার কানে যাবেই।"
"সে স্বাস্থ্যবান এবং আদরে আদরে বিগড়েছে", বলেন ডারউইন।
চলতি বছরের মে মাসে ডারউইন ও তার পরিবার পিনাটের ২১তম জন্মদিন পালন করেছেন। কিন্তু ডারউইন জানান, তিনি এখনো বিশ্বাস করতে পারেন না যে, সেদিনের সেই ছোট্ট বাচ্চাটা এখন বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মুরগি!
পিনাটের বিশ্বরেকর্ডের মালিক হওয়ার যাত্রা শুরু হয় ২০২২ সালের বসন্তে, যখন ডারউইনের বন্ধু টড গিলিহান তাকে গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনপত্র জমা দিতে বলেন।
গিলিহান সবচেয়ে বয়স্ক মুরগি হিসেবে প্রথম গিনেস বুকে নাম লেখানো 'মাতিলদা'র কথা জানতে পারেন। ২০০৪ সালে মুরগিটিকে 'দ্য টুনাইট শো উইথ জে লেনো'তে নিয়ে আসা হয়েছিল। তখন মাতিলদার বয়স ছিল ১৪ বছর এবং এর দুই বছর পর ১৬ বছর বয়সে এটি মারা যায়।
"সে (টড) জানতো যে পিনাট এই রেকর্ড ভাঙতে পারবে", বলেন ডারউইন।
এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মুরগি হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড মাফি নামের একটি আমেরিকান মুরগির। ২০১১ সালে যখন মাফি মারা যায় তখন এটির বয়স ছিল ২৩ বছর ১৫২ দিন।
"টড আমাকে বারবার বলেছিল আবেদন জমা দিতে, অবশেষে আমি দিলাম। কিন্তু একটা মুরগির আসল বয়স আপনি কিভাবে প্রমাণ করবেন?" বলেন ডারউইন।
তিনি জানান, সব প্রশ্নের উত্তর দিতে এবং পিনাটের বয়স নিশ্চিত করতে ভিডিও, সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং একজন পশুচিকিৎসকের বিবৃতি ইত্যাদি পাঠাতে তার ছয় মাসের মতো সময় লেগেছে।
"অনেক বছর আগে আমার কিছু বন্ধুবান্ধব ও ভাগ্নি-ভাতিজারা মুরগিটার সাথে ছবি তুলেছিল, তারিখসহ সেসব ছবি আমার কাছে ছিল। এগুলোই ছিল আমার কাছে থাকা সবচেয়ে ভালো প্রমাণ", বলেন ডারউইন।
অবশেষে গত মার্চে গিনেস কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে পিনাটকে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত মুরগি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।