৭৫ বছরের পুরনো চিঠির সাহায্যে পৃথিবীর অন্যতম বিরল খনিজের সন্ধান
জার্মানির বাভারিয়ান এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি তথা এলএফইউ বায়ার্নের বিশেষজ্ঞরা পুরনো খনিজ সংগ্রহের জন্য একটি জরিপ করার সময় হামবোল্ডটাইন নামের পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া বিরলতম খনিজগুলোর একটির কয়েকটি টুকরো খুঁজে পেয়েছেন।
বিশ্বের মাত্র ৩০টি স্থানে হামবোল্ডটাইনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। জার্মানি, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্র ও ইতালিতে এসব আকর ও খনি অবস্থিত।
এটি খুব কমই ক্ষুদ্র স্ফটিক গঠন করে। প্রকৃতিতে সাধারণত এগুলোকে হলুদ বর্ণের নিরাকার ভর হিসেবে পাওয়া যায়। কার্বন যৌগ ও আয়রন-অক্সাইডের পানির সঙ্গে বিক্রিয়ায় হামবোল্ডটাইন গঠিত হয় এবং স্ফটিক কাঠামোতে কার্বন-অক্সিজেন-হাইড্রোজেনযুক্ত অল্প কয়েকটি 'জৈব খনিজ' এর মধ্যে একটি এটি।
জার্মান খনিজবিদ আগস্ট ব্রেইথাপ্ট সর্বপ্রথম হামবোল্ডটাইন আবিষ্কার করেন। তিনি চেক প্রজাতন্ত্রের ওক্রেস মোস্টের কোরোজলুকি পৌরসভার কাছে একটি বাদামি কয়লা খনিতে এর সন্ধান পান।
এরপর ১৮২১ সালে পেরুর ভূতত্ত্ববিদ মারিয়ানো এডুয়ার্ডো ডি রিভেরো ওয়াই উস্তারিজ এর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করেন।
তিনি ১৯ শতকের জার্মান প্রকৃতিবিদ ও আবিষ্কারক আলেকজান্ডার ভন হাম্বোল্টের নামে খনিজটির নামকরণ করেছিলেন।
ভন হাম্বোল্ট একজন প্রাক্তন খনি প্রকৌশলী ও আগ্রহী খনিজ সংগ্রাহক ছিলেন।
২০২৩ সালে এলএফইউর আর্কাইভ ডিজিটালাইজেশনের সময় ১৯৪৯ সালে এক কয়লা খনি মালিকের লেখা এজেন্সিকে পাঠানো একটি চিঠি পাওয়া যায়।
চিঠিতে আপার প্যালেটিনেটের নাব নদীর তীরের শহর শোয়ানডর্ফ শহরের কাছে ম্যাথিয়াসজেশের কয়লা সিমে হামবোল্ডটাইনের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এজেন্সি তার আবিষ্কারের তথ্য নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও বিশ্লেষণের জন্য কিছু নমুনা চেয়েছিল। তবে এরপর এ নিয়ে আর কোনো কাজ করা হয়েছে বলে মনে হয় না।
কিন্তু চিঠির লেখা দেখে কৌতূহলী হয়ে এলএফইউ-এর ভূতাত্ত্বিক বিভাগের প্রধান রোল্যান্ড আইখর্ন এবং তার সহকর্মীরা এজেন্সির বেসমেন্টে রাখা ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি শিলা ও খনিজ নমুনা সমন্বিত বিশাল ঐতিহাসিক খনিজ সংগ্রহশালা পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন।
তারা ভাবেন, যদি কখনো কোনো নমুনা পাঠানোও হয়, তবে এখনও সেখানে সেগুলোর কিছুটা হলেও থাকতে পারে।
নিয়মতান্ত্রিক খনিজ সংগ্রহের একটি ড্রয়ারে তারা একটি পুরনো কার্ডবোর্ডের বাক্সের ভিতরে জৈব খনিজগুলোর জন্য জার্মান 'অক্সালিত' লেবেলযুক্ত একটি হলুদ খনিজের কিছু টুকরো পায়।
লেবেলে আরও দেখা গেছে, নমুনাগুলো চিঠিতে উল্লিখিত এলাকা থেকেই এসেছে।
আধুনিক রাসায়নিক বিশ্লেষণে ৭৫ বছর আগে আবিষ্কারের তথ্যের সত্যতা মিলেছে।
হামবোল্ডটাইনের আবিষ্কৃত ছয়টি টুকরোর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি বাদামের আকারের।
তবে এই সুসংবাদের সঙ্গে আইখর্নের খনিজ সংগ্রহকারীরা একটি দুঃসংবাদও পায়।
দ্য ম্যাথিয়াসজেচে বাদামি কয়লার ওপেন-পিট খনিটি ১৯৬৬ সালে বন্ধ হয়ে যায় এবং পরবর্তীকালে পানিতে ডুবে যায়। বর্তমানে এই অঞ্চল থেকে আর হামবোল্ডটাইন পাওয়ার সুযোগ নেই।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি