‘চিজ’ বলামাত্র ইঁদুর সেলফি তোলে!
সেলফি বা নিজস্বী তোলা বর্তমান সময়ে খুবই জনপ্রিয় একটি ট্রেন্ড। তবে মানুষের গণ্ডি পেরিয়ে এবার দুটি ইঁদুরের সেলফি তোলার অভ্যাসের কথা জানিয়েছেন ফরাসি শিল্পী অগাস্টিন লিগনিয়ার।
লিগনিয়ার বলেন, তার বাড়িতে থাকা ইঁদুর দুটিকে তাদের রাখা খাঁচার সঙ্গে লাগানো বোতামচালিত ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে দেখে তার নিজেকে 'ভীষণ প্রভাবশালী' মনে হয়েছিল।
লিগনিয়ার সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, ২০২১ সালে স্নাতক কোর্সের অংশ হিসেবে তিনি পোষা প্রাণী বিক্রি করে এমন একটি দোকান থেকে দুটি ইঁদুর কিনেছিলেন। এরপর বাড়ি এনে ইঁদুর দুটিকে রাখার জন্য একটি বড় খাঁচা তৈরি করেন।
লিগনিয়ার এই ইঁদুর দুটির নাম দেন অগাস্টিন ও আর্থার। প্রথমটি তার নামানুসারে এবং দ্বিতীয়টি তার ভাইয়ের।
তিনি বলেন, খাঁচায় নির্দিষ্ট বোতাম চেপে চিনি পাওয়ার পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে তিনি ইঁদুরগুলোকে নিজেদের ছবি অর্থাৎ সেলফি তোলার প্রশিক্ষণ দেন।
লিগনিয়ার জানান, অগাস্টিন ও আর্থার নামের ইঁদুর দুটি প্রথমদিকে চিনি পাওয়ার বোতামটি এলোমেলোভাবে স্পর্শ করত। তবে এক সপ্তাহের মধ্যেই তারা বুঝে যায়, বোতামে চাপ দেওয়ার সঙ্গে চিনি পাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে।
এরপর চিনির বিষয়টি ইঁদুর দুটির মাথা থেকে দূর করার উদ্দেশ্যে লিগনিয়ার তাদের সাধারণ একটি খাঁচায় সরিয়ে নেন।
কয়েক দিন পর ইঁদুর দুটিকে আগের খাঁচায় ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু এবার আর প্রতিবার বোতাম চাপলেই চিনি মিলছিল না। তবে চিনি পাওয়ার জন্য তারা এক মিনিটে একাধিকবার বোতামটি চাপছিল। তাদের এই কর্মকাণ্ডই এক পর্যায়ে সেলফি তোলা সম্ভব করে তোলে।
লিগনিয়ার বলেন, 'যখন আপনার এমন ক্ষমতা থাকে, যা দিয়ে আপনি দুটি ছোট ইঁদুরকেও বশ করে ফেলতে পারেন, আপনার মনে হবে আপনি চাইলে পৃথিবীর সবকিছুকে ম্যানিপুলেট করতে পারেন। এটি সত্যিই একটি অদ্ভুত অনুভূতি।'
লিগনিয়ার তার খাঁচার নকশাটি 'স্কিনার বক্স' এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি করেছিলেন।
আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী বিএফ স্কিনার প্রাণীর আচরণ পর্যবেক্ষণ করার জন্য সর্বপ্রথম এটি আবিষ্কার করেন।
লিগনিয়ার জানান, ১৯৫০ এর দশকে স্কিনারের করা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগুলো থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তিনি। যেগুলোর সাহায্যে প্রাণীদের বিভিন্ন জটিল কাজ শেখানো যায়।
লিগনিয়ার বলেন, সেলফি তোলার বিনিময়ে পুরস্কার দেওয়ার পদ্ধতিটি মূলত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডেটিং অ্যাপগুলোতে ব্যবহারকারীদের ধরে রাখতে যে কৌশল অবলম্বন করে তার অনুকরণ।
তিনি বলেন, যখনই তারা (ইঁদুর) বোতামটি চাপ দেয়, তাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসৃত হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি হয়ে যায়।
লিগনিয়ার ইঁদুর দুটির অনেকগুলো সেলফি দেখান। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি আবার 'হেডশট' স্টাইলে (সেলফি তোলার বিশেষ ভঙ্গি) তোলা।
এভাবে কয়েকদিন সেলফি তোলার পর পোষা ইঁদুর দুটিকে দক্ষিণ ফ্রান্সের আর্লেসে মায়ের কাছে রেখে আসেন লিগনিয়ার।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি