ফ্রান্সকে হারিয়ে টানা দুবার পেস্ট্রি বিশ্বকাপ জিতলো জাপান
বিষয়টি গর্বের। বছরের পর বছর দলগুলো বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের প্রস্তুত করে এ সর্বোচ্চ সম্মান অর্জনের জন্য। তারা বৈশ্বিক মঞ্চে দেশকে উপস্থাপন করার জন্য প্রস্তুতি নেয়।
তবে এটি কিন্তু ফুটবল বিশ্বকাপ নয়। এটি পেস্ট্রি বিশ্বকাপ।
দুই বছর অন্তর অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় মিশর, মরিশাস এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দূরবর্তী দেশ থেকে প্রতিযোগীরা অংশ নেয়। এখানে দলগুলো একবারের জন্য চমৎকার এবং নজরকাড়া ডেজার্ট তৈরি করে। এ বছর ২০ ও ২১ জানুয়ারি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিযোগীরা এবারের আয়োজনে অংশ নেয়।
প্রতিটি দলে তিনজন সদস্য ছিলেন। তারা যথাক্রমে চকলেট, বরফ এবং চিনির ওপর বিশেষজ্ঞ। তাদের কাজ ছিল নিজেদের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য তিনটি ডেজার্ট তৈরি করা: একটি হিমায়িত ডেজার্ট, একটি রেস্টুরেন্ট ডেজার্ট, যার ওপর বিচারকদের টেবিলে বিশেষ গার্নিশ যোগ করা যেতে পারে এবং একটি শো চকলেট।
আর এই সবকিছু সম্পন্ন করার জন্য তাদের হাতে ছিল মাত্র পাঁচ ঘণ্টা।
পেস্ট্রি শেফরা তাদের দেশের রান্নার প্রতিভা তুলে ধরতে উপকরণ ও ডিজাইনের ওপর নির্ভর করেছিলেন। চীনা দল চিনির তৈরি একটি ড্রাগন তৈরি করে। আর মেক্সিকোর প্রতিযোগীরা তাদের ডেজার্টে চকলেট, ভুট্টা এবং অন্যান্য স্থানীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করেছিল।
নিজেদের দেশকে প্লেটে উপস্থাপন করার পাশাপাশি প্রতিযোগীরা থিমযুক্ত পোশাক ও আনুষঙ্গিক বিভিন্ন জিনিসও পরেছিলেন।
ফ্রান্সের দল পরেছিল স্টাইলিশ ব্রেটন স্ট্রাইপড শার্ট ও বেরেট টুপি, মেক্সিকোর শেফরা পরেছিলেন ডে অফ দ্য ডেড উৎসবের চিনির তৈরি খুলি, আর যুক্তরাজ্যের দল তাদের ডেজার্ট তৈরি করেছিল স্মার্ট নিউজবয় ক্যাপ ও বো-টাই পরে।
বিজয়ীরা
২০২৫ সালের আয়োজনটি করা হয় ফ্রান্সের লিয়ন শহরে। ফ্রান্সের দলটি বিজয়ী হতে না পারলেও তারা দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে রৌপ্যপদক নিয়ে সন্তুষ্ট আছে।
এ বছর শীর্ষ স্থান দখল করেছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন জাপান। তাদের দল রেস্টুরেন্ট ডেজার্ট ক্যাটাগরিতে লেমন, পিয়ার, ম্যারিগোল্ড এবং চকোলেট গ্র্যানিটা তৈরি করেছিল, যা আসানোহা (শণ পাতার) আকৃতির ছিল। বরফজাত ডেজার্ট হিসেবে তারা পরিবেশন করেছিল অ্যাপ্রিকট দিয়ে তৈরি এক বিশেষ মিষ্টান্ন, যা ঘূর্ণায়মান খেলার চাকার মতো দেখতে।
জাপান দলের চকলেট বিশেষজ্ঞ মাসানোরি হাতা বলেন, "আমরা জাপানের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে নকশায় তুলে ধরেছি। এতে আমরা আমাদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে এর স্বাদ এবং সূক্ষ্ম ঐতিহ্যবাহী প্যাটার্ন যুক্ত করতে পেরেছি।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা বিজয়ে মুহূর্তটা মনে করতে পারছি না। আমি এতটাই অবাক হয়েছিলাম যে বিশ্বাসই করতে পারিনি। জাপান দুই টুর্নামেন্টে পরপর বিজয়ী হয়েছে। আমি খুবই আনন্দিত এবং গর্বিত।"
অন্যদিকে ফ্রান্সের দলটি তৈরি করেছিল চকলেট ডিমের এক চমৎকার সিরিজ। এগুলোতে ছিল চকোলেট-হ্যাজেলনাট সুফলে ম্যুজ। যার উপর ছিল চকলেট স্ট্রিউজেল। এটি সাইট্রাস-ভ্যানিলা-ইনফিউজড ক্ল্যারিফাইড বাটারে ডুবানো হয়েছিল এবং গ্রিল করা ভ্যানিলা আইসক্রিম এবং ক্লিমেন্টাইন কনফিটের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়েছিল।
এদিকে ব্রোঞ্জ জিতেছে মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ার দল তাদের ফ্রোজেন ডেজার্টের জন্য সবচেয়ে বেশি নাম্বার পেয়েছে। তাদের ডেজার্টটির নাম ছিল 'উজ্জ্বল সাইট্রাস'। এটি মিষ্টি অ্যাপ্রিকট এবং খুবই অল্প মশলার মিশ্রণে তৈরি। এটি দেশটির বহু-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি এক বিশেষ সম্মান।