যে শহরে ভিক্ষা করতেও লাগবে লাইসেন্স!
সুইডেনের একটি শহরে ভিক্ষাবৃত্তিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিয়েছে সে দেশের কর্তৃপক্ষ। তবে উপায়ান্তর না দেখে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে যত্র তত্র বসে পড়লেই হবে না; এরজন্য সংগ্রহ করতে হবে লাইসেন্স। ব্যাপারটি আজগুবি মনে হলেও এমনই ঘটেছে সুইডেনের এসকিলস্টুনা শহরে।
বৈধ পরিচয় পত্রের মাধ্যমে অনলাইনে কিংবা স্থানীয় থানায় গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তির জন্য লাইসেন্সের আবেদন করতে পারবেন যে কেউ। ওই লাইসেন্সের মেয়াদ থাকবে তিন মাস। স্টকহোমের পশ্চিমে এসকিলস্টুনাতে যদি কাউকে লাইসেন্স ছাড়া ভিক্ষা করতে দেখা যায়, তাহলে তাকে জরিমানা হিসেবে ৪ হাজার সেক বা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৮ হাজার টাকা পর্যন্ত গুণতে হতে পারে।
সুইডেনের বেশ কয়েকটি শহরে ভিক্ষাবৃত্তি বেআইনি। ২০১৮ সালের শেষের দিকে সুইডেনের স্কনে প্রদেশে ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ করতে নির্দেশ জারি করেছিল সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। বছরখানেক ধরে বিষয়টি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমার পর ভিক্ষাবৃত্তিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেই রায় দিয়েছিল দেশটির শীর্ষ আদালত। আদালতের যুক্তি ছিল, জনজীবনে অসুবিধা কমাতেই এমন রায় দেওয়া হয়েছে।
আদালতের ওই রায়ের পর স্কনের দেখাদেখি সুইডেনের বেশ কয়েকটি শহরে ভিক্ষাবৃত্তিকে নিষিদ্ধ করেছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে এসকিলস্টুনা শহরে রয়েছে আবার ভিন্ন নিয়ম। এখানে ভিক্ষা করতে হলে সংগ্রহ করতে হবে লাইসেন্স।
সুইডিশ মুদ্রায় ২৫০ ক্রোনা বা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২ হাজার ৩৪০ টাকা খরচ করে ভিক্ষুকরা সংগ্রহ করতে পারবেন এই লাইসেন্স। তবে এই পারমিট ব্যবস্থা নিয়ে রয়েছে সীমাহীন বিতর্ক।
অনেকের মতে, এই ব্যবস্থা ভিক্ষাবৃত্তিকে উৎসাহ দিচ্ছে। এতে করে ভিক্ষা করার আইনি অধিকার পেয়ে যাচ্ছেন ভিক্ষুকরা। বিশেষ করে রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া থেকে সুইডেনে আসা জনগণের একাংশ এই ব্যবস্থায় বিশেষ ভাবে লাভবান হচ্ছেন।
বিতর্ক সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখানে ভিন্ন যুক্তি দেখিয়েছেন। তাদের দাবি, শহরের কতজন মানুষ ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবনযাপন করেন, সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই তথ্যের মাধ্যমে তাদেরকে সাহায্য করার জন্যই নাকি এ ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
২০১৯ সালের অগস্ট থেকে ভিক্ষুকদের জন্য লাইসেন্স দেওয়া শুরু করে এসকিলস্টুনা শহর কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষের দাবি, লাইসেন্সের জন্য নিজের পকেটের টাকা খরচ করতে হয়; এমনকি লাইসেন্সেবিহীন ধরা পড়লে মোটা অঙ্কের জরিমানা গুণতে হয় বিধায় অনেক ভিক্ষুকই নিজেদের পেশা বদলেছেন। অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তির ছেড়ে এখন ফলমূল বিক্রি করে বা অন্য কোনো কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করছেন।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান