অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ৪০.৪২%
অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পর্যন্ত উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ৪০.৪২%। তবে একই সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড় গত অর্থবছরের তুলনায় তেমন বাড়েনি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ মোট ৫২৭৫.৪৩ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৮৮.৭৫% প্রতিশ্রুতি এসেছে ঋণ হিসেবে। বাকিটা এসেছে অনুদান হিসেবে।
গত অর্থবছরের একই সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সরকার ৩৭৫৬.৯৪ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল।
উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে কোনো প্রকল্পের ঋণ বা অনুদান চুক্তি সই হওয়ার পর থেকে তা প্রতিশ্রুতি হিসাবে পাইপলাইনে যোগ হয়।
অন্যদিকে, এপ্রিল পর্যন্ত বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ছাড় হয়েছে ৪৮১৯.৬৬ মিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে প্রায় একই পরিমাণ (৪৮১৯.৪৭ মিলিয়ন ডলার) অর্থছাড় হয়েছিল। উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থবছর নির্ভর করে প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর। প্রকল্পের বাস্তবায়ন গতি থাকলে অর্থছাড়ও দ্রুত হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মূলত কোভিড পরিস্থিতিতে উন্নয়ন সহযোগীদের ঘোষিত বাজেট বরাদ্দের কারণে গত অর্থবছর থেকে প্রতিশ্রুতি বাড়ছে। এ সময়ে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এআইআইবি'র কাছ থেকে বাজেট সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে।
আবার প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর প্রকল্পের অর্থছাড় নির্ভর করলেও, বাজেট প্রতিশ্রুতির অর্থছাড় ঋণ চুক্তির পর পর হয়ে যায়। বাজেট সহায়তার প্রভাব অর্থছাড়ের ওপর পড়ছে। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি কমেছে। এ কারণে প্রকল্প ঋণের ছাড়েও গতি আসছে না।
বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের ১০ মাসে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দের অর্ধেকও ব্যয় করতে পারেনি বেশিরভাগ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে নৌ-পরিবহন, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ বেশ কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ব্যয় ১০ শতাংশের কম।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাজেট সহায়তার কারণে একদিকে প্রতিশ্রুত আদায়ের পরিমাণ বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাজেট সহায়তার ছাড়ও হচ্ছে। কিন্ত প্রকল্পে সহায়তার অর্থ ছাড় বাড়ছে না। অর্থবছরের ১০ মাসে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দের মাত্র ৫৩% অর্থ ব্যয় হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক সহায়তা বাড়াতে উন্নয়ন প্রকল্পে বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে। তা না হলে প্রকল্প নির্ধারিত মেয়াদে শেষ করা যাবে না। আবার নির্ধারিত মেয়াদে শেষ না হলে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে সব চেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে জাপান সরকারের আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার (জাইকা) কাছ থেকে। এ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ১২৯০ মিলিয়ন ডলার ছাড় হয়েছে গত এপ্রিল পর্যন্ত। এছাড়া বিশ্বব্যাংক ৯৪২ মিলিয়ন ডলার, এডিবি ৭৭৯ মিলিয়ন ডলার, রাশিয়া ৭৭৬ মিলিয়ন ডলার, চীন ৪৬৭ মিলিয়ন ডলার অর্থছাড় করেছে একই সময়ে।