ইভ্যালি: কথায় আছে, কাজে নেই
গেল গরমে প্রচণ্ড গরম সহ্য করতে না পেরে গত ২৭ জুন ইয়াসিন সাহেব একটা এসির অর্ডার করে ফেললেন অনলাইন কেনাকাটার প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালিতে। জুন-জুলাইয়ের তীব্র গরম পেরিয়ে শীতের শুরু, আজও ইভ্যালির কাছ থেকে এসিটি এসে পৌঁছায়নি ইয়াসিন সাহেবের বাসায়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা অধিদপ্তরে (ডিএনসিআরপি) ইভ্যালির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে ৯৩টি অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু ২০২০ সালে এসে অভিযোগের পরিমাণ বেড়ে গেছে।
সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত আগস্টে ইভ্যালির বিরুদ্ধে ১১১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। আর একমাস পর সেপ্টেম্বরে অভিযোগের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৯টিতে। গত ১ বছরে এই নিয়ে মোট ৯২৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
এব্যাপারে ভোক্তা অধিকার রক্ষা অধিদপ্তরকে জিজ্ঞেস করা হলে সংস্থাটিত আধিকারিকরা জানান, ইভ্যালির সমস্ত অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয় সমাধান করার পরিকল্পনা থাকলেও এবছর কোভিড মহামারির কারণে বিষয়গুলো আটকে আছে।
'আমরা পুরো পয়সা ফেরত দিচ্ছি'
জামালপুরের সারিসবাড়ি এলাকার মোহাম্মদ সাজ্জাত। গত ২৬ আগস্ট ইভ্যালির কিছু লোভনীয় অফার দেখে প্রায় ৭০ হাজার টাকার পণ্য অর্ডার করেন তিনি।
পণ্যগুলো ছিল ১৩০% ক্যাশব্যাক অফারে স্যামসাঙ ডি৩ রেফ্রিজারেটর, ৫০% ক্যাশব্যাক অফারে আইওয়া স্মার্ট ৪কে অ্যান্ড্রয়েড টিভি এবং আরেকটি ৩২ ইঞ্চি টিভি।
অর্ডার করার ৭ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে পণ্যগুলো তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা থাকলেও গতকাল ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের কোন খোঁজ নেই বলে জানালেন মোহাম্মদ সাজ্জাত। বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের কাছ থেকে কোন সাড়া পাননি তিনি।
এনিয়ে গত ২৬ নভেম্বর ডিএনসিআরপিতে ইভ্যালির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি।
গত ২৬ অক্টোবর ইভ্যালির পক্ষ থেকে জানানো হয়, যেসব ক্রেতা তাদের অর্ডার করা পণ্য পাননি তাদের কাছে আগামী ১০ দিনের মধ্যে পণ্য পাঠানো হবে বা তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
কিন্তু এই কথাও রাখেনি ইভ্যালি। এব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তারা জানায়, এই পণ্য সময়মতো পৌঁছে দেওয়া সংক্রান্ত সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে তারা চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রশাসনিক কিছু জটিলতার কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।
ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল বলেন, 'নতুন অর্ডারের পাশাপাশি পুরনো অর্ডার নিশ্চিত করতেও কাজ করছি আমরা। এছাড়াও যাদের অর্ডার পাঠাতে পারছি না তাদের টাকা পুরোটা ফেরত দিয়ে দিচ্ছি আমরা।'
অর্ডার করা পণ্য ক্রেতাদের কাছে সময়মতো পাঠানোর ক্ষেত্রে তাদের দুর্বলতা স্বীকার করে তিনি জানান, এই সমস্যা কাটাতে ইতোমধ্যেই আরও লোক নিয়োগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
রাসেল আরও জানান, গত অক্টোবরে ৮ লাখের বেশি অর্ডার নিশ্চত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এইসমস্ত পণ্যের মধ্যে আছে ৬ হাজার ৭১৪টি মোটর বাইক, ৩৬ হাজার ৮৯৫টি স্মার্টফোন, ৩২ হাজার ৯৭৭টি ইলেক্ট্রনিক পণ্য, ১ লাখ ২৯ হাজার মুদি পণ্য, ২৮ হাজার ৪৭৪টি পোশাক ও ফ্যাশন সামগ্রী এবং ৬ লাখ অন্যান্য পণ্য।
তবে বর্তমানে কতগুলো অর্ডার বাকি পড়ে আছে- বারবার জিজ্ঞেস করার পরও এই প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি।
অনেক কাস্টমাররের অভিযোগ মোটর বাইক বা টিভির মতো বড় বড় অর্দারই শুধু নয়, প্যারাশ্যূট নারিকেল তেলের মতো ছোটখাট পণ্যের অর্ডারও সময়মতো পৌঁছাতে পারে না তারা।
এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে মাদারিপুরের এইচএম শরিফ এর। তিনি গরমের মাঝামাঝিতে নারিকেল তেলের অর্ডার করেছিলেন। কিন্তু শীত চলে এসেছে। এখনও তেলের বোতল গিয়ে পৌঁছায়নি তার বাসায়। তারও প্রশ্ন- 'বাজারে কি তেলেরও ঘাটতি পড়েছে?'