এলডিসি থেকে উত্তরণে সরকারের আরও সময় নেওয়া উচিত: বিশেষজ্ঞদের মত
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/01/17/139609915_913944346079199_893840321338404204_n.jpg)
কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের সময় বাড়ানোর সুযোগ নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে উত্তরণ পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
বক্তরা বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ পরবর্তী যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে, তার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিযোগী অনেক দেশই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের অবস্থা সুসংগত করছে, কিন্ত এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগুতে পারছে না।
পণ্য বৈচিত্র্য করণের মাধ্যমে রফতানি বাড়ানোর কথা বলা হলেও এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ সফল হতে পারছে না । সংস্কারের মাধ্যমে এসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা না গেলে গ্রাজুয়েশনের পরে বাংলাদেশের রফতানি বড় ধরণের সংকটে পড়বে।
শনিবার মাওলানা ভাষানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বক্তরা এসব কথা বলেন। 'এলডিসি গ্রাজুয়েশন ইন ২০২৪: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপরচুনিটিস' শীর্ষক এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো আলাউদ্দিন।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণা পরিচালক ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, "সহজ সুযোগ অনেকে সময় নেওয়া হয় না। আমরা একটু কঠিন পথ দিয়ে সুযোগ ধরতে চাই। আমরা এলডিসি থেকে উত্তরণও চাই আবার শুল্ক মুক্ত বাজার সুবিধাও চাই। কিন্তু একটা সময় পর এলডিসি সুবিধা থাকবে না। ফলে আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে,"
তিনি আরও বলেন, "২০২৪ সালে এলডিসি থেকে গ্রাজুয়েশন করবে বাংলাদেশ। তবে পরের তিন বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নে শুল্ক মুক্ত বাজার সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।"
ইইউর সঙ্গে ভিয়েতনামের এফটিএ' হয়েছে। এর ফলে ২০২৭ সাল পর্যন্ত ইইউ'র বাজারে ভিয়েনামের পণ্য শুন্য শুল্ক সুবিধা পাবে। যেখানে বাংলাদেশের পণ্য প্রায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক যোগ হবে।
চীন ভবিষ্যেতের জন্য সম্ভবানাময় বড় বাজার। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর চীনের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। চীন ছাড়া জাপান, ভারতের মতো দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে হবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, "আমাদের একটা ভুল ধারণা আছে তা হলো -বাজার উন্মুক্ত করে দিয়ে আমরা খুব বেশি লাভবান হতে পারবো না। এ কারণে আমরা এফটিএ'তে জোর দেইনি,"
তিনি আরও বলেন, "এলডিসি থেকে উত্তরণের পর রফতানি কমবে। এর প্রভাব কর্মসংস্থানেও পড়বে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে নারীর কর্মসংস্থান কমবে। বাংলাদেশে খেলনা, ইলেট্রনিক পণ্যের বাজার বৃদ্ধির বড় সম্ভাবনা রয়েছে। তৈরি পোশাকের বাইরে পণ্য বৈচিত্র্যের মাধ্যমে রফতানি বাড়ানো গেলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। তবে এর জন্য দক্ষতা বাড়াতে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের উদোগ নিতে হবে।"
বাংলাদেশ কলামিস্ট ফোরামের (বিসিএফ) সহ-আহ্বায়ক মো শাহজাহান সিদ্দিকী বলেন, "এফটিএ করতে হলে কিছু সংস্কার করতে হবে। এ কারণে এফটিএ'র ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অনেক পিছিয়ে আছে।"
শুধুমাত্র তৈরি পোশাক, চামড়া বা শিপিং খাতের রফতানির জন্য বন্ড সুবিধা দেওয়া হয়। সম্ভাবনাময় অনেক পণ্যের ক্ষেত্রে বন্ড সুবিধা থাকলে রফতানির সুযোগ বাড়তো বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, "বিল্ডিংয়ের ও যন্ত্রপাতির ওপর ঋণ দেওয়া হয়। কিন্ত চলতি মূলধনের ওপর ঋণ দেওয়া হয় না। খেলাপি হওয়ার এটা একটা মূল কারণ এটি। খেলাপির জন্য শুধু ঋণ গৃহীতা দায়ী নয়, ঋণ পদ্ধতি এবং ঋণদাতারাও এর জন্য দায়ী।"
তিনি আরও বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর রাজস্ব আহরণে বড় ধরণের ধাক্কা আসবে। ফলে রাজস্ব আহরণে বড় ধরণের সংস্কার আনতে হবে। কাস্টম শুল্ক এবং আয়কর প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে অনেক বেশি।"
সোহাগী ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এ টি এম ইফতেখার হোসাইন বলেন, "সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে সরকার সারা দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড) স্থাপন করছে। আইসিটি, চামড়া আরএমজি'র জন্য আলাদা আলাদা ইজেড স্থাপন করতে হবে । তা না হলে সুফল পাওয়া কঠিন হবে।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী বলেন, "রফতানির বৈচিত্র্য বাড়াতে তৈরি পোশাকের মতো সম্ভাবনাময় পণ্য খুঁজে বের করতে হবে।"