কেমন করছে সম্প্রতি এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়া ৫ দেশ
সারা বিশ্বে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোকে চিহ্নিত করতে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) শব্দটি ব্যবহার করে জাতিসংঘ।
একটি দেশকে এলডিসি স্ট্যাটাস দেওয়ার জন্য তিনটি শর্ত দেওয়া হয় হয়– মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ঝুঁকির সূচক।
উত্তরণের জন্য একটি দেশকে তিনটি শর্তের মধ্যে দুইটি পূরণ করতে হয়। তাছাড়া, ডেটা মূল্যায়ন অনুমোদন, উন্নয়ন নীতি কমিটির (সিডিপি) সুপারিশ, সরকারের সম্মতি এবং সবশেষে অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল (ইসিওএসওসি) থেকে অনুমোদন পেলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের মাধ্যমে এই সুপারিশ অনুমোদিত হয়।
এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য একটি দেশকে পরপর দুটি পর্যালোচনাতে অন্তত দুটি শর্ত পূরণ করতে হয়। অথবা দেশটির মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় (জিএনআই) পরপর দুটি পর্যালোচনায় অন্তত দুই গুণ বাড়তে হয়।
২০২৪ সাল পর্যন্ত এলডিসি থেকে উত্তরণের তালিকায় ৪৪টি দেশের নাম রয়েছে। সম্প্রতি উত্তরণ পেয়েছে পাঁচটি দেশ।
সাও টোমে ও প্রিন্সিপ
পশ্চিম আফ্রিকার ছোট দ্বীপরাষ্ট্র সাও টোমে ও প্রিন্সিপ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে এলডিসি থেকে উত্তরণ লাভ করেছে।
এলডিসি থেকে উত্তরণের পর দেশটির মানবসম্পদ সূচক এবং মোট জাতীয় আয়ে (জিএনআই) উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রতিফলিত হয়েছে। তবে এটি এখনও অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে জলবায়ু সম্পর্কিত সংকটের জন্য।
জাতিসংঘ দ্বীপটির সরকারের সাথে পরিবেশবান্ধব পর্যটন এবং চকোলেট উৎপাদনের মতো অর্থনৈতিক উন্নয়ন উদ্যোগের ওপর সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।
দেশটির স্থিতিস্থাপকতা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় নবায়নযোগ্য শক্তি যেমন, দেশটির প্রথম সোলার পার্কে বিনিয়োগ করেছে সরকার।
ভুটান
দীর্ঘ কয়েক দশকের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নতির [দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা এবং আয়ু বৃদ্ধি] পর ভুটান ২০২৩ সালের শেষে এলডিসি থেকে উত্তরণ লাভ করে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতে, ভুটান অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণের জন্য বিভিন্ন সেক্টরে গুরুত্ব দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে– জলবিদ্যুৎ, পর্যটন, উৎপাদন এবং তথ্য প্রযুক্তি।
উত্তরণ সত্ত্বেও দেশটি এখনও বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং অভিবাসনের মতো কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। কোভিড-১৯ মহামারী দেশটির অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন খাতকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ফলে সরকারকে বিকল্প খাত যেমন ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং-এ বিনিয়োগ করতে হয়েছে।
এলডিসি থেকে উত্তরণের পর ভুটানের উন্নয়ন সাহায্যের পরিমাণ কমে গেছে এবং কিছু বিশেষ সুবিধা হারিয়েছে। পাশাপাশি আরও প্রতিযোগিতামূলক বাজার পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় দেশটির রপ্তানির মান উন্নত করার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।
ভানুয়াতু
ভানুয়াতু পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের একটি ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র। ২০২০ সালে ষষ্ঠ দেশ হিসেবে এটি এলডিসি থেকে উত্তরণ লাভ করে।
তবে, ভানুয়াতুর অর্থনীতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতি সংবেদনশীল এবং এটি পর্যটন খাতের ওপর নির্ভরশীল।
ভানুয়াতু একটি 'স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি' তৈরি করেছে। এর লক্ষ্য– উন্নয়নের গতিতে কম বাধা সৃষ্টি করা। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য, দেশটির স্থিতিস্থাপকতা তৈরি এবং উন্নয়নের সাফল্য ধরে রাখা।
এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে কিছু উন্নয়ন সহযোগীতা হারানোর পাশাপাশি, দেশটির রপ্তানির জন্য বিশেষ বাজার সুবিধা হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এটি ভানুয়াতুর অর্থনীতির কিছু খাতকে প্রভাবিত করতে পারে।
দেশটির আয়ের প্রধান উৎস পর্যটন হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে তা কমেছে। তবে, আগামী কয়েক বছরে অর্থনীতি ৪ থেকে ৪.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইকুয়েটোরিয়াল গিনি
ইকুয়েটোরিয়াল গিনি ২০১৭ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ লাভ করে। এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমস্যায় পড়েছে।
এলডিসি থেকে উত্তরণের সময়ে, এটি ছিল প্রথম দেশ, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য গ্রহণের পর এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে বেরিয়ে গেছে। উত্তরণের সময় দেশটির তেলের মাধ্যমে অর্জিত মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় (১৬,০৮৯ ডলার) "শুধু আয়" ভিত্তিক উত্তরণ সীমার (২,৪৮৪) ছয় গুণ বেশি ছিল।
জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলন (ইউএনটিসিএডি) অনুযায়ী, দেশটি তেল রপ্তানির ওপর অনেকটা নির্ভরশীল, যা মোট পণ্য রপ্তানির ৯০ শতাংশ। ফলে, তেলের দামের ওঠানামা ইকুয়েটোরিয়াল গিনির অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। এটি অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণের প্রয়োজনীয়তাকেও তুলে ধরে।
তবে, দেশটির জনসংখ্যার অধিকাংশ এখনও দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। আনোবন নামক একটি দূরবর্তী দ্বীপ প্রদেশের বাসিন্দারা খনি সম্পর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে পরিবেশগত ক্ষতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার পর কঠোর দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন।
সামোয়া
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডাব্লিউটিও) অনুযায়ী, সামোয়া ২০১৪ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ লাভ করে। উত্তরণের আগে সামোয়া আর্থিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। সামোয়া আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল, যার মধ্যে সাইক্লোন পরবর্তী পুনর্গঠন কাজের জন্য বাড়তি খরচের কারণে ঘাটতি বেড়ে যাওয় উল্লেখযোগ্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল।
পরবর্তীতে দেশটি প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরির ওপর জোর দিয়েছে, দক্ষতার ঘাটতি পূরণ করেছে এবং তাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন উন্নত করেছে।
এলডিসি থেকে উত্তরণের পর গত দশকে তারা টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে।