কোভিড পরিস্থিতিতে কারখানা পরিদর্শন পেছানোর দাবি ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পখাতগুলোর
শিল্প খাতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নেতৃত্বে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হতে যাওয়া শিল্প কারখানা পরিদর্শনে সহযোগিতার জন্য শিল্প মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন।
বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এফবিসিসিআই আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভিডিও বার্তায় তিনি এ আহ্বান জানান। বিডার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি খাতের অংশীদাররা সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন।
জসিম উদ্দিন বলেন, সরকার ৪০ হাজারের বেশি শিল্প কারখানা পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার কারখানা পরিদর্শন কার্যক্রম আগামী মাসে শুরুর কথা রয়েছে। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে অন্য কারখানাগুলোরও নিরাপদ কর্মপরিবেশ যাচাই করা হবে। এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এছাড়া শিল্প-কলকারখানা পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুশাসন প্রণয়ন করা হয়েছে। এফবিসিসিআই এ কাজে সকল প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে চায়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে জানানো হয়, পরিদর্শনের তিন দিন আগে সেই প্রতিষ্ঠানকে জানানো হবে। কারখানার ভবনের নকশা থেকে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা সহ সকল নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা করবে বিশেষজ্ঞ দল। ৯০ দিনের মধ্যে ৫ হাজার কারখানা পরিদর্শন করা হবে। মোট ১০৮টি দলে বিভক্ত হয়ে ৫০ দিনে পরিদর্শন সম্পন্নের পর আনুষঙ্গিক কাজ বাকী দিনগুলোতে শেষ করার পরিকল্পনা করেছে বিডা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ভিডিও বার্তায় এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, "বিডার নেতৃত্বে খাত সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে সম্মিলিত টিম শিল্প কলকারখানা পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শনের পদ্ধতি ও চেকলিস্ট তৈরি করেছে। এটি আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। আশা করছি, এতে শিল্প উদ্যোক্তারা উপকৃত হবেন"।
তিনি আরো বলেন, "সরকারের এমন উদ্যোগে শুরু থেকেই ব্যবসায়ীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু কোন দুর্ঘটনা ঘটলে দেখা যায় শুধু শিল্প মালিকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কোন গাফিলতি ছিল কী না সে ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ তখন নেয়া হয় না। আমাদের দাবি থাকবে যে কোন ঘটনার সাথে জড়িত সবাই আইনের আওতায় আসুক"।
পরিদর্শনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দলের আহবায়ক অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, "এই অর্থবছরের শুরু থেকেই বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই কাজে এফবিসিসিআইকে যুক্ত করা হয়েছে। সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে আমরা পরিদর্শনের কাজটি শেষ করতে চাই। এটা প্রথম ধাপের কাজ। এই ধাপের সফলতার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। যেহেতু দেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে। সুতরাং, এখনই উপযুক্ত সময় এ খাতের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেয়া। আমরা সে লক্ষ্যে এগোচ্ছি। সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন"।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যবসায়ী নেতারা অবশ্য করোনা পরিস্থিতির ক্ষতি উত্তরণের এই সময়ে এমন পরিদর্শনের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন। তাদের দাবি, এই সময়ে অনেকে টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত। সেখানে এখনই ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিদর্শনে গেলে ব্যবসায়ীরা কারখানা বন্ধ হওয়ার ভয়ে থাকবে। অনেকে ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে কারখানা বন্ধ করতে পারে, সেসময় শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়বে, এমন প্রসঙ্গও সামনে নিয়ে আসেন ব্যবসায়ী নেতারা।
এ ব্যাপারে সরকার এবং এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে তাদেরকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। এই পরিদর্শনের পরে কোন প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ না করে তাদের ব্যাপারে করণীয় কী হতে পারে সেটার জন্য কমিটি বসবে। কোন কারখানার পরিস্থিতি নাজুক হলে, তাদেরকে একটা সময়সীমা বেঁধে দেয়া হবে বলেও জানানো হয়।
তবে এক্ষেত্রে কারখানার অবস্থা উন্নয়নের পাশপাশি প্রতিটি কারখানায় মাসে অন্তত একদিন নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কর্মীদের ওয়ার্কশপ করার বিষয়টি নিশ্চিত করার পরামর্শ দেয় বিডা। খাত সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করা সহ ব্যবসায়ীদের সুরক্ষার বিষয়টি মাথার রেখেই পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনার দাবি জানানো হয়।